নিহতের চাচা আজহারুল বলেন, “আমাদের ছেলেটা কোনো রাজনীতি করত না। আর ওতো অনেকদিন ধরে অসুস্থ, খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছিল।”
Published : 29 Jul 2023, 10:40 PM
আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শেষে দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ছুরিকাঘাতে নিহত তরুণ ‘ওষুধ কিনতে বেরিয়ে’ মারামারি মধ্যে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
নিহত রেজাউল করিম (২১) একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। শুক্রবার গোলাপশাহ মাজারের কাছে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মারামারির মধ্যে তিনিসহ পাঁচজন ছুরিকাহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাহবাগ থানার এসআই আব্দুল মন্নাফ জানান, শুরুতে নিহত তরুণের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার হাতের ছাপ মিলিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য থেকে জানা যায় তার নাম রেজাউল করিম। তিনি শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়নকোটা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
রেজাউলের চাচা আজহারুল ইসলাম শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রেজাউল বড়। শেরপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করে দুই বছর ধরে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছিলেন তিনি।
“গত ঈদের আগে ওর ডেঙ্গু জ্বর হয়। সে বাড়ি চলে যায়। পরে জন্ডিসেও আক্রান্ত হয়। বেশ কিছুদিন বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পর গত সপ্তাহে ঢাকায় আসে রেজাউল।
“নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছিল ওর। শুক্রবার বিকেলে মাদ্রাসা থেকে ওষুধ কিনতে বের হয়েছিল বলে সহপাঠীরা আমাকে জানিয়েছে। এরপরই পুলিশ ফোন করে তার মৃত্যুর খবর জানায়।”
আজহারুল বলেন, “আমাদের ছেলেটা কোনো রাজনীতি করত না। আর ওতো অনেকদিন ধরে অসুস্থ, খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছিল।”
বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টায় শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরারা জানান,শান্তি সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখনই ঢাকা- ২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সমর্থকরা মারামরিতে জড়ায়।
সংঘর্ষের সময় রাস্তায় থাকা নেতাকর্মীরা দোড়াদৌড়ি শুরু করেন। এক পর্যায়ে এক পক্ষের ধাওয়ায় অন্য পক্ষ সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের দিকে চলে যায়। শান্তি সমাবেশের মাইকে তখন বলা হয়, ‘আপনারা শৃঙ্খলা বজায় রাখুন, কোনো বিশঙ্খলায় জড়াবেন না’।
সংঘর্ষের পর পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা রেজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মো. আরিফুল (১৮), জোবায়ের (১৮), রনি (৩২) ও মোবাশ্বেরকে (২৮) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া জানান, নিহতের স্বজনরা শনিবার রাতে থানায় গেছেন। একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ওই সময় পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
আহতদের মধ্যে জোবায়ের হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বাসা বংশালে। সেখানে একটি স্কুলে তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন।
পেটে ছুরির জখম নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই কিশোর দাবি করেছেন, তিনি ‘মোবাইলের কভার কিনতে’ গুলিস্থানে গিয়ে মারামারির মধ্যে পড়ে যান। আহত অন্যদেরও তিনি ‘চেনেন না’।
আর আহত রনির বাসা কেরানীগঞ্জে। তার বুকে ছুরি লেগেছে। নিজেকে তিনি কেরানীগঞ্জ যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
আরিফুলের পায়ে ছুরির আঘাত লেগেছে। গুলিস্তান এলাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন বলে জানান তিনি।
মোবাশ্বের এর গায়ে লেগেছে ছুরির আঘাত, তিনি নিজেকে আরামবাগ এলাকার দিনমজুর হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
শুক্রবার মারামারির ঘটনার পর কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ দাবি করেন, যারা আহত হয়েছেন, তারা তার অনুসারী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেছেন, তার কোনো কর্মী ওই মারামারিতে জড়িত ছিল না।
শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমাবেশ শেষে আমার লোকজন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়, তখন পেছন থেকে এমপি কামরুল ইসলামের লোকজন হামলা করে, এতে আমার অনেক লোক আহত হয়েছে।
“একজন মারা গেছে শুনে আমি ঢাকা মেডিকেলে এসেছি। আর উনার লোকজন যে হামলা কেরেছে সেটা সবাই দেখেছে, ড্রোন উড়তে ছিল তখন, সব প্রমাণ আছে।”
অন্যদিকে কামরুল ইসলাম বলেন, "কিসের মারা গেছে, কে মারা গেছে। আর আমার লোকজন কোনো হামলায় ছিলো না। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।”
কামরুল ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য। ওই আসনে আগামীতে প্রার্থী হতে চান শাহীন।
এর আগে ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে গত ৮ জুন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানেও মারামারিতে জড়ান এ দুই নেতার অনুসারীরা।
আরও পড়ুন
শান্তি সমাবেশ শেষে গুলিস্তানে পাঁচজন ছুরিকাহত, একজনের মৃত্যু