তারেকের বাবা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘মরণোত্তর বিচার’ করার দাবিও জানিয়েছে যুবলীগ।
Published : 10 Aug 2023, 03:17 PM
পাঁচ মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে দেশে ফেরাতে ‘যা যা করার’ তা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক ও জোবায়দাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করাসহ চার দফা দাবিতে আওয়ামী যুবলীগের স্মারকলিপি গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা তাদের স্মারকলিপি পেয়েছি। আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে করা দরকার, সেটা আমরা করব।
“আমরা সমস্ত ঘটনা জানি। ইতোমধ্যে তারেক জিয়া ও তার স্ত্রী আদালত দ্বারা দণ্ডিত। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যা যা করার আমরা করব।”
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে চার দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেন।
দাবিগুলো হল- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা এবং বিএনপি-জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
যুবলীগের দাবিগুলো ‘যৌক্তিক’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেব।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট। ১৯৭৫ সালে হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড যে জিয়াউর রহমান, সেটি জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট। কারণ তারাই এ হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী। তারাই বন্দুকের নল উঁচু করে দল গঠন করেছে।
“তারা সন্ত্রাস দ্বারা সৃষ্টি। এ সংগঠন বাংলাদেশের জনগণের ওপর ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যে নির্যাতন করেছে, একাত্তরের আদলে তারা যেভাবে সন্ত্রাস, নির্যাতন খুন, রাহাজানি করেছে, আমরা নৈতিকভাবে মনে করি বিএনপি-জামায়াতের এদেশের রাজনীতি করার অধিকার নেই।”
পরশ বলেন, “আমরা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই। এটি আজকের যুব সমাজ এবং প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে যারা সংগ্রাম করে যাচ্ছে, সেই সকল নাগরিকের প্রত্যাশা। এটা না হলে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না। তাই জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এখন সময়ের দাবি এবং একটি ন্যায্য দাবি বলে আমরা মনে করি।”
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে যে ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষ শক্তিকে সর্বোপরি আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনারসহ তার সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। সেই রায় কার্যকর করার জন্য আমরা চাই খুনি তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
“সে (তারেক রহমান) বিদেশ থেকে ন্যক্কারজনক কার্যকলাপ করে যাচ্ছে, সন্ত্রাস করছে। …তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আমাদের দাবি বিএনপি-জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে, যাতে তারা এ দেশে রাজনীতি করতে না পারে।”
পরশ বলেন, “বিভিন্ন দেশে যে পলাতক খুনিরা রয়েছেন এবং তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় দাঁড় করালেই আমাদের প্রকৃতপক্ষে যে প্রগতি, উন্নয়ন ও মূল্যবোধের যে উৎকর্ষ সাধন সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করবে।”
একই দাবি নিয়ে যুবলীগ আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনে যাবে বলেও জানান ফজলে শামস পরশ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এই সময়ে তার অনুপস্থিতিতেই পাঁচ মামলায় তার সাজার রায় হয়েছে।
সর্বশেষ ২ অগাস্ট দুদকের করা এক মামলার রায়ে ঘোষিত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার দায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে; তখন তারেক গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
প্রবাসে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি, মা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নেন।
তারেক বিদেশে থাকা অবস্থায়ই এর আগে চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় আসে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় তার।
বিএনপি দাবি করে আসছে, তাদের ‘নেতৃত্বশূন্য করতেই’ নির্বাচনের আগে তারেক ও জোবায়দাকে নতুন মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে কর্মসূচিও পালন করেছে দলটি।