ভরাট করা অংশে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে জলাশয় পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
Published : 28 Jan 2024, 08:15 PM
জলাশয় ভরাট করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ল্যাব নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে ভরাট করা অংশে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে জলাশয় পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রোববার এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ এ রায় দেয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুরের গৈদারটেকের তিন বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করে।
এ দুই রিট আবেদনের শুনানি একসঙ্গে করে রায় ঘোষণা করা হয়।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী, মেজবাহুর রহমান শুভ ও সৈয়দা সিলমা তামারিনা।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। বিএডিসির পক্ষে এস এম জহুরুল ইসলাম, রাজউকের পক্ষে ইমাম হাসান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে রেজা-ই-রাব্বি শুনানি করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএডিসির স্থাপনা ভেঙে জলাশয়ের ভরাট করা অংশ ৩ মাসের মধ্যে পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং জলাশয় হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মিরপুর মৌজার গৈদারটেক এলাকায় ১১৭ একর জলাশয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়াটার রেগুলেটিং পন্ড হিসেবে চিহ্নিত। এ ওয়াটার রেগুলেটিং পন্ড ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ এ জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত। আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে 'সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি' নির্মাণের জন্য এ জলাশয়ের ১১ একর জমি ভরাট করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন।
এ জলাশয় ভরাটের সংবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উল্লেখিত জলাশয় ভরাটে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়।
জলাধার ভরাট করে বিএডিসির গবেষণাগার, ডিএনসিসির আপত্তি
গত বছরের ২৯ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার পাঠানো ‘অতি জরুরি’ চিঠিতে বলা হয়, “রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের খালসহ রেগুলেটিং পন্ডের উন্নয়ন কাজ চলছে। পাশের বিএডিসির ১১৭ একর জমি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান অনুযায়ী ওয়াটারবডি হিসেবে চিহ্নিত। জলাধার আওতাভুক্ত জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণে রাজউকের ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।”
এই জমিতে ভারী স্থাপনা নির্মাণ হলে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির নেওয়া ‘রেগুলেটিং পন্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম’ বাধা তৈরি হবে জানিয়ে বলা হয়, “এ অবস্থায় ওই জমিতে কোনো ভারী নির্মাণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।”
ড্যাপের নীতিমালা অনুযায়ী পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে বজায় রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও করা হয় চিঠিতে।
এরপর গত বছরের ১ অগাস্ট বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা একটি জনস্বার্থমূলক রিট আবেদন করলে হাই কোর্ট রুল জারি করে এবং ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
রিটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগরের পরিচালক এবং সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালককে বিবাদী করা হয়।
দুইটি রিটের একসঙ্গে শুনানি নিয়ে বিএডিসির সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি নির্মাণের জন্য জলাশয় ভরাট অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত।
আরও পড়ুন
জলাশয় ভরাট করছে সরকারি সংস্থা, ঠেকাতে না পেরে আদালতে উত্তর সিটি