“এগুলো ভরাট করলে তো ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। …ওই জায়গাটায় পানি জমে, ভরাট করলে পানি যেতে পারবে না”, বিএডিসিকে পাঠানো চিঠিতে বলেছে সিটি করপোরেশন।
Published : 03 Apr 2023, 01:14 AM
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন- বিএডিসি রাজধানীর গাবতলীর গৈদারটেক এলাকায় যে গবেষণাগার তৈরি করছে সেটি ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপে দেখানো হয়েছে জলাধার হিসেবে।
ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই নিচু জমিতে এই স্থাপনা তৈরি নিয়ে আপত্তি আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির। বিএডিসি চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের ছাড়পত্র ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে স্থাপনাটি। নগর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই জমিতে স্থাপনা নির্মাণ হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও প্রকট হবে।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক বলছেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জমিতে কোনো স্থাপনা তৈরি করার সুযোগ নেই।
কল্যাণপুর রেগুলেটিং পন্ড লাগোয়া ওই জমির মালিক বিএডিসি। তবে রেগুলেটিং পন্ড এবং লাগোয়া এসব নিচু জমিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পানি এসে জমা হয়। সেখান থেকে পানি নিষ্কাশন করে ফেলা হয় তুরাগ নদে।
ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় রেগুলেটিং পন্ডের ৫৩ একর জমিও বুঝিয়ে দেয়। এছাড়া ওই বেড়িবাঁধের পাশে সংস্থাটির আরও ৫৩ একর জমি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১১৭ একর জমির মালিক বিএডিসি।
বিশাল এই জলাধারের এলাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, পশ্চিমে বেড়িবাঁধ সড়ক, দক্ষিণে আদাবর এবং পূর্বদিকে গৈদারটেক এলাকা।
গত বুধবার ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার পাঠানো ‘অতি জরুরি’ চিঠিতে বলা হয়, “রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের খালসহ রেগুলেটিং পন্ডের উন্নয়ন কাজ চলছে। পাশের বিএডিসির ১১৭ একর জমি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান অনুযায়ী ওয়াটারবডি হিসেবে চিহ্নিত। জলাধার আওতাভুক্ত জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণে রাজউকের ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।”
এই জমিতে ভারী স্থাপনা নির্মাণ হলে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির নেওয়া ‘রেগুলেটিং পন্ডের উন্নয়ন কার্যক্রমে’ বাধা তৈরি হবে জানিয়ে বলা হয়, “এ অবস্থায় ওই জমিতে কোনো ভারী নির্মাণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।”
ড্যাপের নীতিমালা অনুযায়ী পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে বজায় রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও করা হয় চিঠিতে।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই জায়গায় শীতের সময় ফসল হবে আর বর্ষাকালে তা পানি ধরে রাখবে। কিন্তু এখানে বিএডিসি বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলছে। এতে ঢাকার পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে।
“এগুলো ভরাট করলে তো ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। …ওই জায়গাটায় পানি জমে, ভরাট করলে পানি যেতে পারবে না।”
রাজউকের ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “জলাধার আইন অনুযায়ী সেখানে কোনো স্থাপনা করতে পারে না। যে কোনো কিছুই করতে গেলে রাজউকের ছাড়পত্র লাগে। রাজউকও চাইলেই ছাড়পত্র দিতে পারে না, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হয়।
“এ জন্য জলাধারে স্থাপনা নির্মাণের ছাড়পত্র পাওয়া অনেক কঠিন। এ ধরনের ছাড়পত্রের জন্য কেউ আমাদের কাছে কোনো আবেদন করেছে বলে আমার জানা নেই।”
গাবতলীর গৈদারটেক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিচু এলাকা জুড়ে ধানের চাষ করা হয়েছে। আর বিএডিসির হর্টিকালচার উন্নয়নকেন্দ্রের সামনের অংশে অনেকটা জায়গা জুড়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে মাটি সমান করতে একটি এক্সক্যাভেটর রাখা আছে। একপাশে একটি ছোট ঘর নির্মাণ করছেন শ্রমিকরা।
কীসের ঘর নির্মাণ হচ্ছে জানতে চাইলে শ্রমিকদের কেউ কিছু বলতে পারেননি। বিএডিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তারা।
বিএডিসির সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক এবিএম গোলাম মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকমকে বলেন, “এই প্রকল্পের পরিকল্পনা অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। ১১ একর জমিতে এসব গবেষণাগার করা হচ্ছে।”
তার ভাষ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আপত্তির বিষয়টি এখনও জানেন না তিনি।
রাজউকের অনুমতি না নেওয়া এবং জলাধার ভরাটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এটা অনেক আগে প্ল্যান করা। ওই প্ল্যান পাস হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা শুধু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।”
এ বিষয়ে জানতে বিএডিসির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোসে এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি।