নামি স্কুলে ভালো ফলাফলের ‘পাগলামো’ নিয়ে শিক্ষার দুই মন্ত্রীর উদ্বেগ

পরীক্ষায় ‘ভালো’ ফলের জন্য শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক নিপীড়ন চলছে, বলছেন দুই মন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 01:31 PM
Updated : 22 May 2023, 01:31 PM

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর নামি-দামি স্কুলে ভালো ফলাফলের দিকে ছোটার ‘পাগলামো’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও।

সোমবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় দিবসগুলোতে সৃজনশীল কাজে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এনিয়ে কথা বলেন তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রামের তথাকথিত নামি-দামি স্কুলগুলোর সৃজনশীল কাজ নেই। এই বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবক ও শিক্ষকরা সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের বলা যায় এক প্রকার মানসিক নির্যাতন করছেন।

“সেখানে পড়াশোনার বাইরে আমরা তাদের কিছু করতে দিই না, দিচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের এখানে চাপ দেওয়া হয়, তাদের ভালো ফল করতে হবে; ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। এই চাপে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন করে দেওয়া হচ্ছে।”

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তার ‘ডেপুটির’ বক্তব্য নিয়ে বলেন, “সৃজনশীলতার চর্চা ক্লাসে পড়িয়ে শিখিয়ে সম্ভব না। আমি মাননীয় উপমন্ত্রী যেসব কথা বললেন তার সঙ্গে শতভাগ একমত।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “এখানে আমরা দেখেছি যে রাজধানী ঢাকার বাইরের অনেক শিক্ষার্থী পুরস্কার পাচ্ছে। তারা অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করছে। দেখা যাবে এরাই দেশে থাকবে, দেশের ভবিষ্যত, অর্থনীতি গড়বে।

“আর যাদের উচ্চ ফলাফলের জন্য মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বড় একটা সংখ্যা এক পর্যায়ে বিতৃষ্ণায় দেশ থেকে পালিয়ে যাবে, অথবা বিদেশে পড়তে গেলে আর আসবে না।”

নওফেল বলেন, “শুধু ভালো ফলাফল নয়, তাদেরকে জীবনমুখী করার জন্য সৃজনশীল করা, সংস্কৃতিমুখী করা, বিদ্যালয়, মাদ্রাসা সব পর্যায়ে যেন এটি হয় সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতেও সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যে ভবিষ্যতের জন্য আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করছি, সেই ভবিষ্যতে মূল দক্ষতাই হবে শিখতে পারার দক্ষতা। সেখানে একজন শিক্ষার্থীর যোগাযোগের দক্ষতা, সূক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, অনেকের সঙ্গে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

“আর যে শিক্ষার্থী যত বেশি সৃজনশীল ও মুক্তচিন্তা করবে সেই শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে ততই দক্ষ হয়ে উঠবে।”

মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এসেছি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নতুন ভাবে করা হয়েছে।

“২০২৫ সালের মধ্যে সব শ্রেণিতে এই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।”

বক্তৃতার পর তিন জাতীয় দিবসে শেখ রাসেল দেয়ালিকা তৈরি করে বিজয়ী নয় প্রতিষ্ঠান ও বিজয় দিবসে অঙ্গীকার লিখে বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সচিব সোলেমান খান এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. কামাল হোসেনও এ সময় উপস্থিতি ছিলেন।  

এর আগে শিক্ষার্থীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পদ্মা সেতুর ওপর দুটি ডিসপ্লে দেখায়।

যারা পেল পুরস্কার

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪৭তম বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কবিতা, ছড়া, রচনা লিখে ও চিত্রাঙ্কন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘শেখ রাসেল দেয়ালিকায়’ উপস্থাপন শাখায় প্রথম হয় রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ।

দ্বিতীয় হয়েছে পটুয়াখালীর চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তৃতীয় হয় নোয়াখালীর হাতিয়ার চর কিং উচ্চ বিদ্যালয়।

১৮ অক্টোবর 'শেখ রাসেল দিবস' এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 'শেখ রাসেল দেয়ালিকায়' গান, কবিতা, সৃষ্টিশীল লেখা ও ছবি এঁকে শিক্ষার্থীরা উস্থাপন করে।

এই শাখায় সেরা পুরস্কার পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠান হল: পাবনার খতিব আব্দুল জাহিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের রাজ্জাকুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।

বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীরা তিন বিভাগে (ক, খ, গ) ১০০ শব্দের মধ্যে তাদের অঙ্গীকার লিখে ইমেইলে পাঠায়।

‘ক’ বিভাগে বিজয়ী তিন শিক্ষার্থী হল হবিগঞ্জের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের শেখ ফারহিন হোসেইন সায়মা, ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের তানজিম ওয়াসিফ হৃদ্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের হাওয়া আক্তার রানী।

‘খ’ বিভাগে বিজয়ী চার জন হল ঢাকার রহমতউল্লা মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাইরিম রানা, মিতালী বিদ্যাপীঠের সাদিকা ইসলাম, চাঁদপুরের আল আমিন অ্যাকাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাইসা ইসলাম, এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শাফওয়াত জামিল।

‘গ’ বিভাগে পুরস্কার পাওয়া তিনজন হল ঢাকা কমার্স কলেজের আদিবা আজম মাটি, রাজধানীর নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিদরাতুল মুনতাহা এবং চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজের এবং মোহাম্মদ ইয়াছিন।

বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ প্রতিপাদ্য উল্লেখ করে ছবি, উদ্ধৃতি, পোস্টার শেখ রাসেল দেয়ালিকায় উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীরা।

এই শাখায় সেরা তিন প্রতিষ্ঠান মানিকগঞ্জের মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি সুফিয়া আব্দুল হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের মুন্সীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়।