জাকির হোসেনের ‘অধীনে’ চলবে মনিপুর স্কুল, বললেন কামাল মজুমদার

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন নিয়ে গত কিছুদিন ধরে ঢাকার পুরনো এ স্কুলে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দুই পক্ষ; বেকায়দায় শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 01:34 PM
Updated : 11 March 2023, 01:34 PM

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টিতে অচলাবস্থার মুখে পড়া ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন এবং তার অধীনে স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ক্লাসে ফেরারও আহ্বান জানান এক সময় এ স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল মজুমদার।

প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গত কয়েকদিনের উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।

শনিবার বিদ্যালয়ের রূপনগর শাখায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন, যিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে এ দায়িত্ব পান।

মিলনায়তনে তখন বিদ্যালয়ের ৫০ জনের মত শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী দিয়ে মিলনায়তন পূর্ণ ছিল। মঞ্চেও ছিলেন বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

ঢাকার পুরনো এ স্কুলের মূল ক্যাম্পাসসহ কয়েকটি শাখায় শিক্ষার্থী প্রায় ৪০ হাজার এবং শিক্ষক ৮৫০ জনের মত।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পরিচয় দিয়ে কামাল মজুমদার বলেন, "প্রাক্তন অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ শেষ, স্বাভাবিকভাবে নতুন আসবে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামান্য ব্যাপার উচ্চ আদালতে গড়িয়েছে, যা হওয়ার দরকার ছিল না। হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন।

"হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন জায়গায় এটি নিয়ে মামলা, হামলা, নিউজে এসেছে এখানে মারামারি হবে। এত নামি একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হবে তা আমরা দিতে পারি না। আগে যিনি ছিলেন তার অধীনে শিক্ষকরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেভাবেই, আজকে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তার অধীনে কাজ করে যাবেন।"

প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এ স্কুলে গত কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা আসছে। এতে শিক্ষার্থীদের জিম্মি দশায় পড়ার কথা বলেন অভিভাবকরা। এর একদিকে আছেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের অনুসারীরা, অন্যদিকে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের সমর্থকরা। বয়সের কারণে অবসরে যাওয়া প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদের দায়িত্ব ছাড়তে না চাওয়ায় বিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর মধ্যে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ছুটির ঘোষণা আসে।

গত মঙ্গলবার এক নোটিসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটির নোটিস দেন। এরপর বুধবার বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির আলাদা নোটিসে ১২ মার্চ থেকে বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেন।

ছুটি ঘোষণা নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও নোটিস দিয়েছে, যা বৃহস্পতিবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘এখতিয়ারবহির্ভূত’ভাবে ছুটি ঘোষণা এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে সভাপতিকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে দেলোয়ার হোসেনের জবাব চাওয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা ১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার।

তিনি বলেন, "এখন নতুন আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমার প্রত্যাশা তার নেতৃত্বে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আমরা অর্জন করব। ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ৮০ হাজার অভিভাবকের স্কুলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। ১২ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক। হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়ে যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার অধীনে আপনারা কাল থেকেই শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরবেন।"

এসময় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকিরের হাতে মাইক্রোফোন তুলে দেন।

নিজের দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জাকির হোসেন বলেন, "আমার আগের বা সাবেক যে অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি ৬০ বছর পূর্ণ হবার পর তাকে অনেকবার জানিয়েছি বিধি মোতাবেক আমরা একজন আসি। তিনি আমাদের কথা পাত্তা না দিয়ে এই পদে বসে ছিলেন। কলিজা কেটে দেখানো গেলে বুঝতেন তাকে আমরা কত ভালবাসি।

“এখন হাইকোর্ট একটা নির্দেশনা দিয়েছেন সেই নির্দেশনা মেনে আমি এসেছি। আমার এই পদে বসার কোনো আগ্রহ ছিল না। স্কুল সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চলবে। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।"

এরপর শিল্প প্রতিমন্ত্রী মনিপুর স্কুলে কোনো ‘গ্রুপিং নাই’ মন্তব্য করে বলেন, “সমস্ত কিছুর অবসান হয়েছে, কেউ তারপরও গ্রুপিং করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকে এক মহল স্কুলের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করছে এগুলো করে কোনো লাভ হবে না।“

তিনি স্কুলের অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে হয়েছে জানিয়ে বলেন, “এখানে কোনো অর্থ আত্মসাতের ব্যাপার নেই। অভিভাবকদের জিম্মি করে এই অর্থ উঠানোর যে অভিযোগ উঠে এসব ভিত্তিহীন। স্কুলের বেতন ফিস থেকে যে টাকা আসে তা থেকে আমরা এসব ঋণের কিস্তি দেই।

“মনিপুর স্কুলে গত পাঁচ বছরে এক টাকাও বেতন বাড়েনি। অনেক সমকক্ষ স্কুলে এর তুলনায় ডাবল বেতন।“

স্কুলের অর্থ অপচয় বা আত্মসাৎ হলে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত বা সরকারিকরণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিচালনা কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, “সুপারভিশন বডি হচ্ছে ট্রাস্ট, নন এমপিও প্রতিষ্ঠান চলতে তা লাগে, এর কোনো ক্ষমতা নাই। এরা শুধুই লেখাপড়া ভালো হচ্ছে কি না দেখবে। এখন জাকির সাহেব ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, তিনি এর সদস্য সচিব হবেন। বাকি ছুটিছাটা, পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন সব সরকারের নিয়ম অনুসারে চলবে।"

Also Read: ‘এখতিয়ারবহির্ভূত’ ছুটি: মনিপুর স্কুলের সভাপতিকে ঢাকা বোর্ডের শোকজ