খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 31 Dec 2022, 11:07 PM
নববর্ষ মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে তা উল্লেখ করে সবার জীবনে কল্যাণ কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদায়ী বছরের শেষ দিন শনিবার পৃথক বাণীতে তারা এ কল্যাণ কামনা করেন।
খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, “নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা।”
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণ উৎসবে যে ভাটা পড়েছিল তা মনে করিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেইন সংকট। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।”
বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে সমাজের দুস্থ, অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের মানুষও যে প্রতিবছর খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদযাপনে শামিল হয়, সেই বাস্তবতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টাব্দ তাই জাতীয় জীবনে এবং প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।”
‘একজনের আনন্দ যেন অন্যদের বিষাদের কারণ না হয়’ সেদিকে খেয়াল রেখে নববর্ষ উদযাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্র প্রধান।
আলাদা বাণীতে দেশের জনগণ, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “প্রকৃতির নিয়মেই নতুন বছর মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে এবং নব উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলায় অনুপ্রেরণা যোগায়।”
সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন, আমরা দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি এবং ধর্মীয় উগ্রবাদসহ সন্ত্রাসবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলি।”
বিদায়ী বছরে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু চালু করেছি। ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল যোগাযোগ চালু করেছি। ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলায় উন্নয়নকৃত ১০০টি মহাসড়ক উদ্বোধন করেছি।”
এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্ন করা, দেশের ২৫ জেলায় ১০০টি সেতুর উদ্বোধন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (প্রথম পর্যায়) উদ্বোধনের তথ্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের অন্যান্য মেগা ও মাঝারিসহ সকল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে।”
সরকার গ্রামাঞ্চলে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “ফলে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে, দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে, মাথাপিছু আয়সহ অন্যান্য সামাজিক সূচকেও আমরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছি।”
ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' বাস্তবায়ন শুরু করেছি।”
বিশ্বজুড়ে শান্তি কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ সারা পৃথিবীতে নিরীহ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।”