Published : 09 Jan 2023, 05:39 PM
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়েছে সরকার।
সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তার মেয়াদ বাড়ানোর আদেশ দেওয়া হয়।
এর ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইজিপির দায়িত্বে আসা এ পুলিশ কর্মকর্তা।
দায়িত্বরত অবস্থায় আইজিপি পদে কোনো কর্মকর্তা এবারই প্রথম চাকরির বয়সসীমা শেষের পরও বর্ধিত মেয়াদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। এর আগে কেউ চৌধুরী আল-মামুনের মত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি বলে সাবেক আইজিপিরা জানান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১২ জানুয়ারি অথবা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দেড় বছর তিনি পুলিশ বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন।
বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়ার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে তখনকার র্যাবের প্রধান চৌধুরী আল মামুনকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন হয়েছিল।
চৌধুরী আল মামুন ৩০ সেপ্টেম্বর নতুন দায়িত্ব বুঝে নেন। চাকরির বয়সমীমা পূর্ণ হওয়ায় তার ১১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা।
সোমবারের প্রজ্ঞাপনে তার অবসোত্তর ছুটি এবং অন্যান্য সুবিধা স্থগিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আদেশ দেয় সরকার।
বেনজীরের মতই পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাব থেকে আইজিপির দায়িত্বে আসেন আল-মামুন। বেনজীর আইজিপি হওয়ার পর ২০২০ সালে র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান তিনি। এর আগে তিনি সিআইডি প্রধানের পদে ছিলেন।
বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা আল-মামুন ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর গ্রেড ১ এ পদোন্নতি পান।
দায়িত্বরত অবস্থায় আইজিপি পদে আল-মামুন প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে বর্ধিত মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও পুলিশের শীর্ষ এ দায়িত্বে এর আগেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথাও জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধানরা।
তারা জানান, অন্তত তিনজন কর্মকর্তাকে ২০০৩ থেকে ২০০৬ সময়কালে আইজিপি হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছিল বিএনপি সরকার, যাদের মধ্যে দুজন অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা এবং একজন অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা।
চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ার পর তারা চুক্তিতে পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে এসেছিলেন বলে জানান সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক।
“চাকুরিরত অবস্থায় পুলিশের শীর্ষপদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনা এটাই প্রথম,” মন্তব্য করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবসরে চলে যাওয়া সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা শহুদুল হক (২২ এপ্রিল, ২০০৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৪) এবং আশরাফুল হুদাকে (১৫ ডিসেম্বর, ২০০৪ থেকে ৭ এপ্রিল ২০০৫) বিএনপি সরকার পুলিশের আইজি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল।”
এছাড়া পুলিশ থেকে নিয়মিত অবসরে চলে যাওয়ার কিছু পরে মো. আব্দুল কাইয়ুমকে আইজিপি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক (৭ মে, ২০০৫ থেকে ৬ জুলাই, ২০০৬) নিয়োগ দিয়েছিল ওই সময়কালে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকার বলে জানান তিনি।
চৌধুরী আল-মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জনস্বার্থেই এ নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তার ‘দক্ষতা ও সততা’ ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
পুলিশ প্রধান আল-মামুনের জন্ম ১৯৬৪ সালে ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে। তিনি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে।
১৯৮৬ সালে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হিসেবে পুলিশে চাকরি শুরু করেন আল-মামুন।
কর্মজীবনে তিনি পুলিশ সদর দপ্তর, মহানগর পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিভিন্ন জেলা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও কাজ করে এসেছেন তিনি।
কর্মক্ষেত্রে অবদানের জন্য আল-মামুন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) ভূষিত।
আরও পড়ুন: