সকালে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে শারদীয় দুর্গা পূজার 'কল্পারম্ভ' শুরু হয়।
Published : 20 Oct 2023, 11:37 AM
চন্ডীপাঠ, ঢাক-ঢোল, কাঁসা আর শঙ্খের আওয়াজে মুখর হতে শুরু করেছে দেশের মন্দির-মণ্ডপ, যা চলবে বিজয়া দশমী পর্যন্ত।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিল্ব বৃক্ষ বা বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে হয় শারদীয় দুর্গাপূজার 'কল্পারম্ভ'। দেবী দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করা হয় দেশ তথা বিশ্বে অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠার।
সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয়েছে কল্পারম্ভ। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে।
রাজধানীতে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোর থেকেই ব্যস্ত দেখা যায়। কাজের ফাঁকে সেখানে পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বরুণ চক্রবর্তী বলেন, “ষষ্ঠীর সকালে কল্পারম্ভ করার জন্য আমাদের এখন আয়োজন সাজাতে হচ্ছে, এই সময়টা খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই পর্বটা শেষ করতে হয়।”
মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায় বেশ তৎপর। সকালেই র্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের ডক স্কোয়াড টিম তল্লাশি চালায় মন্দির এলাকায়।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পূজা বিষয়ক উপদেষ্টা প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ষষ্ঠীর সকালের পর্বটি মূলত কল্পারম্ভ, মানে হল- আমরা সংকল্প করলাম যে পূজা করব।
“আমাদের ধারণা বা আমরা কল্পনা করছি যে, দেবী বিল্ব বৃক্ষে এসেছেন। তাকে আমরা পূজা করব, এই সংকল্প করাটাই হল কল্পারাম্ভ। আর সন্ধ্যায় বোধন এবং অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। বোধনটা হলো উপলব্ধি করা যে তিনি এসেছেন। সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু হবে।”
দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্গা মণ্ডপে বোধনের মাধ্যমে দেবীকে জাগিয়ে তোলা হবে। পরে অধিবাস ও আমন্ত্রণ করা হবে। এদিন মায়ের মুখ উন্মোচিত হয়। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন দশভূজা দেবী দুর্গা।
স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে পদার্পণ করবেন দেবী। পাঁচ দিনের এ সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, স্বরস্বর্তী চার সন্তান। আরও রয়েছে কার্তিকের কলা বউ।
শারদীয় দুর্গোৎসব: দেবীর মন ‘তুষ্ট করে’ বিশ্বশান্তির প্রত্যাশা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। আর রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন।
অকাল বোধনের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করা হয় চিন্ময়ী রূপে মূর্তিতে বিরাজ করার জন্য। সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল অধিবাস ও আমন্ত্রণ। এই নিয়মের মাধ্যমে দেবীকে তার আসন গ্রহণ করতে এবং পূজা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান- বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ মণ্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে ও ব্যাপক আয়োজনে দুর্গা পূজা শুরু হয়েছে।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ঘোটকে আসছেন দেবী
পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে আসবেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। এর ফল ‘ছত্রভঙ্গ’। ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমন অশুভের বার্তা দিচ্ছে, তবে ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি।
দেবী কখনও ঘোড়ায় চড়ে, কখনও দোলায়, হাতিতে কিংবা নৌকায় চড়ে আসেন, আবার গমনও করেন। ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমনকে অশুভ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বির্পযয়ের বার্তা থাকে। ২০২৩ সালে দেবী দুর্গার ঘোটকে আগমন এবং গমন, যার ফল ছত্রভঙ্গ।
ছত্রভঙ্গ মানে রাজনৈতিক হানাহানি, যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, অস্বস্তিকর একটা অবস্থা বিরাজমান থাকে। একটা অশুভ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এবারের আগমন এবং গমন-দুটোই ঘোটকে হবে, ফলে এটা অশুভ লক্ষণ। ফলে আরাধনার মাধ্যমে মায়ের কাছে বিশ্বশান্তি কামনা করবেন ভক্তরা।