এদের সবাই জামায়াত-শিবির কর্মী, যারা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে জড়ো হয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
Published : 15 Aug 2023, 11:44 PM
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর অনুসারী জামায়াত নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরের এ ঘটনার পর কয়েকজনকে আটকের কথা জানানো হলেও রাতে ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম। এরা সবাই জামায়াত-শিবির কর্মী বলে জানান তিনি।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে তার ভক্ত-সমর্থকরা বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় জড়ো হলে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
দুপুরের এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত, পুলিশের উপর হামলার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, এসআই সালাহ উদ্দিন বাদী হয়ে ১৬ জনের নামে এবং অজ্ঞাত এক থেকে দেড়শত জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বুধবার আদালতে তোলা হবে।
সাঈদীর মৃত্যুতে মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা করার দাবি তুলেছিল তার দল জামায়াতে ইসলামী। পুলিশ অনুমতি না দিলেও ওই সময় নেতাকর্মীরা মসজিদের বাইরে জড়ো হতে থাকেন, তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন পুলিশও সেখানে শক্ত অবস্থানে ছিল।
জামায়াতের নেতাকর্মীরা যখন বাইরে জড়ো হচ্ছিল তখন জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত চলছিল। এর মধ্যে একদল জামায়াতকর্মী জোর করে গায়েবানা জানাজা শুরু করতে চাইলে মসজিদের ভেতরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
মতিঝিলের পুলিশ উপ কমিশনার বলেন, “ভেতরে শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর কিছু জামায়াত-শিবির কর্মী বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ এলে তারা ভেতরে চলে যায়। তখন ভেতরে থাকা শোক দিবস পালনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।”
পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে; তবে পুলিশ মসজিদের ভেতরে ঢোকেনি বলে জানান তিনি।
পল্টন থানার ওসি মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন মিয়া বলেন, “ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দোয়া ও মোনাজাত দুপুরে ১টায় শেষ হয়। তারপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দোয়া মাহফিল চলছিল। ঠিক ওই সময় সেখানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।”
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদী সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা যান।
তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করেও জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এলাকায় তাণ্ডব চালায় বলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক আহমেদ জানান।
জামায়াতকে যে ঢাকায় গায়েবানা জানাজা করার অনুমতি দেওয়া হবে না, তা সকালের ওই ব্রিফিংয়েই জানিয়ে দেন তিনি।
তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায় নাই, এটা তারা আবারও প্রমাণ করল।”
একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদী পরে ইসলাম ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
বায়তুল মোকাররমে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সাঈদী সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া