“অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন, তার পরদিন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।”
Published : 09 Aug 2023, 01:51 PM
ঢাকার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের মেট্রোরেল পথের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে, এর কয়েকদিন পরই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
আগারগাঁওয়ে বুধবার এক অনুষ্ঠানে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, “অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন, তার পরদিন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।”
তিনি জানান, প্রথমে আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল- এই তিন স্টেশনে ট্রেন থামবে। পর্যায়ক্রমে বাকি স্টেশনগুলো খুলে দেওয়া হবে। সেজন্য দুই মাস সময় লাগবে। জানুয়ারির দিকে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের মেট্রোরেল পথ নির্মাণের কাজ আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমীন উল্লাহ নূরী।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি অক্টোবরের ১৫ তারিখের মধ্যে আমাদের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে কোনো দিন সময় দিবেন, সেদিনই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে।”
মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলবে কি না, এ প্রশ্নে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিদ্দিক বলেন, “প্রথমে আমরা সীমিত আকারে সীমিত সময়ের জন্য ট্রেন চালাব। যখন দেখা যাবে পুরো সিস্টেম ভালোভাবে চলছে, তখন আমরা এটার সঙ্গে মার্জ করে দেব। পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে।”
শুরুতে সবগুলো ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছু ট্রেন মতিঝিল যাবে, কিছু আগারগাঁও পর্যন্ত যাবে। ট্রেনের নম্বর থাকবে। সে নম্বর অনুযায়ী কোন ট্রেন আগারগাঁও পর্যন্ত, কোন ট্রেন মতিঝিল পর্যন্ত যাবে সেটা বলা থাকবে।
“যারা মতিঝিল পর্যন্ত যাবেন, তারা ওই ট্রেনে চড়বেন। এটা সাময়িক বিষয়, জানুয়ারি থেকে পুরোদমে ট্রেন চলবে।”
পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সময়সূচিও কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে ছিদ্দিক বলেন, “আমরা দেখেছি বিকালের দিকে অনেক যাত্রী হয়। সেখানে ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে আনা দরকার। আমরা সেক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সিও কমিয়ে দেব।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ রুট অ্যালাইনমেন্টে সড়কের মিডিয়ানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিন উল্লাহ।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের কাজ করার সময় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৭৭টি গাছ কাটা পড়ে। এজন্য ওই অংশে মেট্রোরেলের ডিপো, স্টেশন প্লাজা, সড়কের মিডিয়ানে ৫ হাজার ৭৪৭টি গাছ লাগানো হবে। এছাড়া ২৪ হাজার ৭১৮টি শোভাবর্ধনকারী গাছ থাকবে।
বৃক্ষরোপণের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে। এজন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে, তারা আগামী তিন বছর বৃক্ষরোপণ এবং গাছের পরিচর্যা করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই যাত্রী চলাচল শুরু হয় দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনে। পরে ধাপে ধাপে এই পথের মাঝের নয়টি স্টেশন খুলে দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা পেরিয়ে সাড়ে ছয় বছর পর মেট্রোরেল চালু হয়। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইনের নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি-৬।
ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল পথে প্রথম অংশের মত দ্বিতীয় অংশের স্টেশনও ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে সাতটি স্টেশন পড়েছে, যার মধ্যে আছে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, সচিবালয় ও মতিঝিল। এর মধ্যে অক্টোবর খুলতে চলেছে ফার্মগেট, শাহবাগ ও মতিঝিল স্টেশন।
আরও পড়ুন-
মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুক্রবার