“হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন রায়ে খালাস পেয়ে গেছেন। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট না, আপিল করব,” বলেন সামিয়া সাবা চৌধুরী।
Published : 13 Mar 2024, 01:06 PM
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রায়ে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়’ বাদীপক্ষ; রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করার কথা বলেছেন।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার পর সগিরার মেয়ে সামিয়া সাবা চৌধুরী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার সময় আমার বয়স ছিল ছয় বছর। আমার মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন। তারা রায়ে খালাস পেয়ে গেছেন।
“পরিকল্পনাকারী কীভাবে খালাস পায়। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট না। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”
ডা. হাসান আলী ছিলেন সগিরা মোর্শেদের ভাসুর, আর সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন তার স্ত্রী। তাদের পাশাপাশি মন্টু মণ্ডল ওরফে মিন্টু নামের আরেকজনকে বুধবার খালাস দিয়েছেন বিচারক। অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়নি আদালতে।
আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। দুইজনের রায়ে সন্তুষ্ট, আর দুই জনের রায়ে সন্তুষ্ট নই। রায় আরো ভালো হতে পারত। আমরা আপিল করব।
“বিশ্বাস করি, আইন ব্যবস্থা এখনো চালু রয়েছে। প্রচণ্ড চাপ কাজ করেছে। কিন্তু ফরচুনেটলি চাপের মধ্যে থেকেও জজ সাহেব মোটামুটি ভালো রায় দিয়েছেন। তবে আরো ভালো রায় হতে পারত।”
৩৫ বছর আগের ওই ঘটনায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বুধবার রায় ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ বিচারে এ মামলার ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আলোচিত মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। এরপর দুই দফা পিছিয়ে রায় দিল আদালত।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সারাহাত সালমাকে আনতে যান। সিদ্ধেশ্বরী রোডে মোটরবাইকে আসা আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।
ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত হিসেবে মন্টু ও মারুফ রেজাকে শনাক্ত করলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্তের পর বলেছিলেন, ‘স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে’ ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মোটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।
যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, “পারিবারিক অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা থেকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিজের শ্বশুরবাড়ির ঘনিষ্ঠদের হাতে খুন হন বিত্তবান গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ।”
আরও পড়ুন-