১০টি জাতীয়পত্র বানিয়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস।
Published : 06 Apr 2024, 10:35 PM
নিজের নামে ১০টি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের একজন নির্বাচন কমিশনের আউটসোর্সিং ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। তার নাম পল্লব দাস। পুলিশ বলছে, তিনিই এনআইডিগুলো বানিয়ে দিয়েছিলেন।
অন্য তিন জনের মধ্যে জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিসের নামেই এনআইডিগুলো বানানো হয়। তিনি এসব এনআইডি ব্যবহার করে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। সেই টাকায় ঢাকা ও নিজের জেলায় সম্পদ গড়েছেন। আরো ৫০ কোটি ঋণের চেষ্টা করছিলেন।
গ্রেপ্তার বাকি দুই জন হলেন রফিকুল ইসলাম খাঁন ও আলিফ হোসেন, যারা জয়নালকে এই কাজে সহায়তা করবেন।
শনিবার ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, শুক্রবার মিরপুর ডিওএইচএসের অফিস থেকে জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যে ধরা হয় বাকিদের।
ব্যবসায় লোকসানের পর প্রতারণায়
গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন জানান, এক সময় ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতেন জয়নাল। সেই ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রতারণায় জড়ান।
তিনি একটি কোম্পানি খুললেও আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করেন। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সে ঋণ নিতেন।
ডিবি প্রধান জানান, জয়নালের জাতীয় পরিচয়পত্রগুলোতে নাম ও ঠিকানা সঠিক থাকলেও প্রতিটির নম্বর ছিল আলাদা।
কোনোটাতে তিনি (জয়নাল) দাঁড়িসহ ছবি দিতেন। কোনোটাতে গোঁফ, কোনোটাতে দাড়ি গোঁফ ছাড়া থাকত। কোনোটায় দুই বছর আগের আবার কোনোটায় পরের ছবি দিতেন। একই জমি, একই ফ্ল্যাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন।
ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, “জয়নাল ডিওএইচএসে ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নিয়েছিলেন। একটি অফিস থেকে সাত নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন।”
জয়নাল বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ৩০ কোটি টাকা ফেরত দেননি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “এসব টাকায় তিনি বসুন্ধরা এলাকায় একটি সাত তলা বাড়ি, উত্তরা, আশকোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় আট থেকে নয়টি ফ্ল্যাট ও মাদারীপুরে বাড়ি করেছেন।”
তার অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ৫০টি সিল উদ্ধার করার কথাও জানান হারুন। বলেন, জয়নাল আয়করের বিভিন্ন ভুয়া ফাইল তৈরি করতেন, ভূমি অফিসের সহযোগিতায় জমির ভুয়া দলিলও তৈরি করতেন। এসব ভুয়া দলিল বানিয়ে জমির নামজারিও করতেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য এসব কাগজপত্রই ব্যবহার করতেন।
এজন্য তাকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন কি না তাও খতিয়ে দেখার কথাও জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন।
টাকার বিনিময়ে এনআইডি
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, জয়নালকে এনআইডিগুলো বানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পল্লব দাস।
পল্লব যে অফিসে চাকরি করতেন সেই অফিসারের ব্যবহৃত সার্ভারের পাসওয়ার্ড তার কাছ থাকত, এই সুযোগে তিনি এসব করতেন। প্রতি এনআইডি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে তিনি নিতেন দুই থেকে তিন লাখ টাকা।
আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, পল্লব দাস জয়নালের মত আর কতজনকে এ রকম জাতীয় পরিচয়পত্র করে দিয়েছেন, সে বিষয়ে তারা জানার চেষ্টা করবেন।
পল্লবের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আরো কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি থাকে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিবির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত উপ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল এবং অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিবির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার জাবেদ ইকবাল।
আরও পড়ুন:
‘জালিয়াতি করে’ ব্যবসায়ীর নামে ক্রেডিট কার্ড, তোলা হয়েছে লাখ টাকা