রাজনৈতিক সহিংসতায় এক মাসে নিহত ৫, আহত ৫৪৪: এমএসএফ

নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন করে এবং একজন সাবেক ইউপি সদস্য রয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 05:35 PM
Updated : 31 May 2023, 05:35 PM

নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সহিংসতায় মে মাসেই পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে; একই সময়ে সভা-সমাবেশে ‘বাধা’ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫৪৪ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়; ১৮টি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরির কথা বলেছে সংস্থাটি, যা নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করার কথা বলা হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের সই করা ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং’ প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত পাঁচজনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে দুজনের মৃত্যু হয়েছে; এর বাইরে একজন সাবেক ইউপি সদস্য এবং আরও দুজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত ৫৪৪ জনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১১ জন।

এই সময়ে নির্বাচনী সহিংসতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগ ও ‘শান্তিপূর্ণ’ সভা-মিছিলে বাধাদান অব্যাহত ছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়, “সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৩৫টি ঘটনা ঘটেছে।

“চলতি মে মাসে বিএনপির বিরুদ্ধে ২৪টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৫৬৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৭ জন। বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আরও ৩৩৯ জনকে।”

আদালতে জামিন নিতে গিয়ে ১০৯ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান অবস্থায় ১৩৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়; এদের মধ্যে ১১২ জন বিএনপি ‍ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠন এবং ৫৮ জন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী।”

এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিনটি ঘটনায় পাঁচজন অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, এই মাসে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন নারী। গত মাসে কারা হেফাজতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৬টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন শিশু, সাতজন নারী ও ১৮ জন পুরুষ।

প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আবু সাইদ ওরফে চাঁদের প্রসঙ্গটিও আসে।

তার বিরুদ্দে আট জেলায় ১০টি মামলা হয়েছে; এর মধ্যে দুটি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

‘সীমান্তে হত্যা’

সীমান্তে হতাহতের প্রতিবাদ ও প্রতিকারে সরকার ‘ব্যর্থ’; এই পরিস্থিতি জনমনে ক্রমাগত প্রশ্নের সৃষ্টি করছে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছে। এক জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

“ভারতীয় সীমান্তে এক বাংলাদেশি যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে এক কিশোরকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনে করে ফেরত দিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছে বিএসএফ। পিটিয়ে হত্যার নয় মাস পরে একজনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষীরা, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

“এছাড়া বান্দরবানের রুমা উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী শূন্যরেখায় দুই দফায় পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে দুজন বাংলাদেশি নিহত এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন; এতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন,” বলা হয় প্রতিবেদনে।

এই সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮টি মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জন বিএনপি কর্মী এবং একজন যুবক।

এই মাসে দুজন সাংবাদিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে; পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৪ জন সাংবাদিক হয়রানি, তিনজন হত্যার হুমকি ও আটজন সাংবাদিক স্বার্থান্বেসী মহলের আক্রমণের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন।

এ সময়ের মধ্যে ৪৫৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার ৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৪ জন প্রতিবন্ধী। হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন।