সাজনার ভাষ্য, “মরদেহের গায়ে থাকা পাঞ্জাবি, দাঁত ও মুখমণ্ডল দেখে আমি স্বামীকে চিনতে পারছি। আমার স্বামী সব সময় পাঞ্জাবি পরত, নামাজ পড়ত।”
Published : 20 Dec 2023, 03:14 PM
ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কাঁদছিলেন সাজনা আক্তার; অপেক্ষায় ছিলেন স্বামীর লাশের জন্য।
মঙ্গলবার মর্গে এসে স্বামীর লাশের জন্য আকুতি জানান তিনি। কিন্তু ময়নাতদন্ত আর ডিএনএ পরীক্ষায় পরিচয় নিশ্চিত করে লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা জানায় পুলিশ। এরপর বুধবার ফের তিনি মর্গে আসেন।
সাজনার দাবি, নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে নাশকতার আগুনে যে চারজনের প্রাণ গেছে, তাদেরই একজন তার স্বামী খোকন মিয়া (৩৫)।
ঘটনার দিন তিনি মর্গে একটি লাশের দাঁত, পাঞ্জাবি আর শরীর দেখে নিজের স্বামী বলে দাবি করেন। পুলিশ পরদিন আসতে বললে ফের মর্গে এসে ধরনা দেন।
সাজনা বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ক্রোনি গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করেন। খোকন মিয়া ওই কারখানার সহকারী অপারেটর। তাদের ৮ বছরের এক ছেলে ও এক বছরের একটি মেয়ে আছে।
খোকনের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার জুলসা গ্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের বিসিক এলাকায়।
খোকন তার ভাতিজির বিয়ের জন্য বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন জানিয়ে সাজনা বলেন, সেখান থেকে ফেরার জন্য সোমবার রাতে খোকন, তার মা বকুলা বেগম ও এক বছরের মেয়ে শারমিনকে নিয়ে মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনে ওঠেন। রাত ৯টায় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়, এরপর আর হয়নি।
ট্রেনে আগুনে চারজনের মৃত্যুর খবর মঙ্গলবার স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন সাজনা। স্বামীকে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে মর্গে ছুটে যান।
সাজনা বলেন, “ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে দুটি মরদেহ দেখি। এর মধ্যে একজনের গায়ে ছিল পাঞ্জাবি। দাঁত ও মুখ দেখে আমার স্বামীকে চিনতে পারছি। আমার স্বামী সব সময় পাঞ্জাবি পরত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত।
“মঙ্গলবার রাতেও ঢাকা মেডিকেলে আসছিলাম, এখানে স্যাররা কইছে ডিএনএ টেস্টে ম্যাচিং না হলে আমাদের লাশ দিবে না।”
সাজনা লাশ দাবি করলেও পুলিশ বলছে, লাশের চেহারা চেনা যাচ্ছে না। ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার এসআই সেতাফুর রহমান বলেন, “শনাক্ত না হওয়া দুটি মরদেহই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ম্যাচিংয়ের দাবিদারকে হস্তান্তর করা হবে।”
আরও পড়ুন-