গুলশানের সড়কে আসছে ‘স্মার্ট পার্কিং’

এতে গাড়ি রাখার ঝক্কি কমার পাশাপাশি যানজটও কমবে বলে ঢাকা উত্তরের মেয়র আশা করছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 06:53 PM
Updated : 14 Nov 2022, 06:53 PM

যেখানে সেখানে গাড়ি রাখা বন্ধ করে যানবাহনে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ঢাকার গুলশানের কয়েকটি সড়কে অ্যাপভিত্তিক পার্কিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সড়কের কোথায় গাড়ি রাখার জায়গা আছে, তা জানা যাবে। জায়গা খালি থাকলে গাড়ি রাখা যাবে। এজন্য ঘণ্টা হিসেবে ফি দিতে হবে, ফি জমা দেওয়া যাবে অ্যাপের মাধ্যমেই।

যৌথভাবে এক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সমন্বয় কাউন্সিল (এলওসিসি)। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটি নিয়ে গঠিত হয়েছে এলওসিসি।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় গুলশানের ৯টি সড়কে শুরু হচ্ছে এই স্মার্ট পার্কিং। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাইলট প্রকল্প চালুর কথা রয়েছে। গুলশানে স্মার্ট পার্কিং সফল হলে পুরো ডিএনসিসি এলাকা অ্যাপভিত্তিক পার্কিংয়ের আওতায় আসবে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, গুলশান ৬২, ৬৩, ৬৪, ৫৮, ১০৩ নম্বর সড়ক এবং গুলশান দুই নম্বর আউটার সার্কেলের ৪৬ নম্বর সড়কের অংশ, দুই নম্বর সার্কেলের ৫২ নম্বর সড়কের অংশ, গুলশান দুই নম্বর আউটার সার্কেলের কাঁচাবাজার সামনে এবং গুলশান দুই নম্বর ইনার সার্কেলের পাশের ৪ নম্বর সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা হচ্ছে।

এরমধ্যে ৬২, ৬৩, ৬৪, ৫৮, ১০৩ নম্বর সড়ক এবং গুলশান ২ আউটার সার্কেলের কাঁচাবাজার অংশ- এই ছয়টি জায়গায় সড়কের সমান্তরালভাবে এবং বাকি জায়গাগুলোয় কোনাকুনি (৬০ ডিগ্রি কোণ)গাড়ি রাখা যাবে। শুরুতে দুইশ গাড়ি রাখার জায়গা হচ্ছে, দুটি স্থানে হবে মোটরসাইকেল পার্কিং।

ডিএনসিসি থেকে জানা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য প্রথম দুই ঘণ্টায় ৫০ টাকা এবং পরের প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। মোটর সাইকেলের জন্য প্রথম দুই ঘণ্টা ১৫ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং এরপরের প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা করে পার্কিং দিতে হবে।

ডিএনসিসির মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,সড়কের যেখানে-সেখানে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট হচ্ছে, ডিএনসিসিও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

“এ কারণে পার্কিং ব্যবস্থায় একটা আমূল পরিবর্তন আনতে চাই। বিশ্বের সব দেশে পার্কিংয়ের ফি আছে, কিন্তু আমাদের এখানে নাই। আমরা অ্যাপের মাধ্যমে এই পার্কিং চালু করব।”

সড়কের একটি অংশ পার্কিংয়ের জন্য ছেড়ে দিলে তা যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাবে কি না- এ প্রশ্নে আতিকুল ইসলাম বলেন, “সড়কগুলোয় এখনও অবৈধ পার্কিং হচ্ছে। কিন্তু আমরা কোনো রেভিনিউ পাচ্ছি না। আমরা যদি নির্দিষ্ট স্থানে করে দিই, তাহলে জনগণও জানলো পার্কিংয়ের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে। এর বাইরে পার্কিং করলে পুলিশও ফাইন করবে।”

ডিএনসিসি মেয়র জানিয়েছেন, মোবাইল অ্যাপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। নভেম্বরের শুরু বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। পরবর্তীতে ডিএনসিসির সব এলাকায় এ ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হবে।

এলওসিসিসির মহাসচিব রাফেজ আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সড়কের কোনো জায়গায় কেউ একবার গাড়ি রাখলে একটানা কয়েক ঘণ্টা থাকছে। ওই সময় অন্য কেউ গাড়ি রাখতে পারছে না।

“এখন যেটা হবে প্রথম দুই ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা, পরের ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হবে। ফলে কেউ দীর্ঘক্ষণ গাড়ি রেখে দেবে না। আমরা চাচ্ছি, কেউ যেন জায়গাটা অযথা অকুপাই করে না রাখে। দ্বিতীয়ত একটা অনুমোদিত জায়গায় গাড়ি পার্কিং করে।”

পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে এলওসিসির মহাসচিব রাফেজ বলেন,পার্কিংয়ের জায়গাগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পার্কিং এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে। পার্কিংয়ের জায়গায় একজন কর্মী থাকবেন।

“গাড়ি পার্কিং এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়াও পার্কিংয়ের জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও গাড়ি রাখা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে কেউ গাড়ি রাখছে কি না, তা দেখা হবে। বাইরে পার্ক করলে জরিমানা করা হবে।”

ডিএমপি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডমটকমকে বলেন, “ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারকারীদের অনেকেই জানেন না কোথায় পার্কিং করা যায়। ফলে যেখানে সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে পার্কিং করে। অ্যাপভিত্তিক পার্কিং চালু হলে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে।

“এই উদ্যোগের ফলে জানা যাবে কোথায় পার্কিং আছে। যখন জায়গা পাবে তখনই সে সঠিক জায়গায় পার্কিং করতে পারলে যানজট কম হবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ের জায়গায় সিসি ক্যামেরা, সিকিউরিটি থাকায় পার্কিংও নিরাপদ হবে।”

ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, গাড়ি পার্কিংয়ের রোডমার্কিং, ট্রাফিক সাইন বসানো হয়েছে, তৈরি হয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও।

গাড়ি পার্কিংয়ের নিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, “মোবাইল অ্যাপে ঢোকার পর কোন কোন এলাকায় খালি জায়গা আছে তা দেখা যাবে। খালি জায়গাটি ১০০ মিটারের মধ্যে হলে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বুকিং দেওয়া যাবে। অথবা পার্কিংয়ের জায়গায় গিয়ে খালি পেলে ওখানে বসেই বুকিং দেওয়া যাবে। প্রতিটি পার্কিং এলাকায় একজন কর্মী থাকবেন।

“কোনো গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বুকিং দিলে ওই কর্মীর কাছেও সেই তথ্য চলে যাবে। গাড়িটি সেখানে গেলে ওয়ার্ডেন গাড়ির নম্বর মিলিয়ে দেখে নির্ধারিত জায়গা দেখিয়ে দেবেন। আর পার্কিংয়ের বুকিং দেওয়ার পর থেকেই সময় গণনা শুরু হয়ে যাবে।”

সোমবার গুলশানের ৬২, ৬৪ এবং ৫৮ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, স্মার্ট পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু গাড়িও রাখা আছে।

খিলগাঁও থেকে প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে গুলশান আসেন ইদ্রিস আলী। একটি ব্যক্তিগত গাড়ির এই চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্মার্ট পার্কিংয়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এখনও অ্যাপ ডাউনলোড করেননি।

“আমার স্যারের অফিস এখানে। প্রতিদিন সকালে আসতে হয়। গাড়ি রাখা নিয়া ব্যাপক ঝামেলা। সুযোগ পাইলেই সার্জেন্ট মামলা করে দেয়। টাকা দিয়া পার্কিংয়ের সুবিধা থাকলে ভালোই হবে।”

আরেকটি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি স্মার্ট পার্কিংয়ের বিষয়টি এখনও জানেন না। তবে পদ্ধতিটা চালু হলে খারাপ হবে না।

“বিকালে স্যার এই পার্কে হাঁটতে আসেন। আমি গাড়ি নিয়া বাইরে থাকি। কিন্তু রাস্তায় পার্কিং করলে প্রায়ই মামলা খাই। নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিংয়ের সুযোগ থাকলে ভালো।”

যেভাবে করতে হবে নিবন্ধন

অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর এবং আইফোন ব্যবহারকারীরা অ্যাপ স্টোর থেকে স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন।

অ্যাপে গিয়ে একটি আকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।

অ্যাপ ওপেন করলে No AccountYet এই ঘরে গিয়ে Click Here –অপশনে ক্লিক করে পরের ধাপে যেতে হবে।

এই অংশে ব্যবহারকারীর পুরো নাম, মোবাইল নম্বর, প্রাইভেটকার হলে ঘর অথবা মোটর সাইকেল হলে মোটর সাইকেলের ঘর পূরণ করতে হবে। দিতে হবে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর। পাশাপাশি প্রাইভেটকার বা মোটর সাইকেলের নম্বরপ্লেটসহ একটা ছবি আপলোড করতে হবে। একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে ক্রিয়েট অ্যাকাউন্ট-এ ক্লিক করলে একটি ওটিপি আসবে। ওই ওটিপি ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

নিবন্ধনের পর মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাপে ঢোকা যাবে।