‘বালা মুসিবত’ থেকে মুক্তির প্রার্থনা ঈদের জামাতে

অবসরে যাওয়ার আগে শেষ ঈদের নামাজ জাতীয় ঈদগাহে পড়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2023, 03:25 AM
Updated : 22 April 2023, 03:25 AM

আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে আরেকটি উৎসবের দিন, ঈদগাহ আর মসজিদে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি, পেশা আর বয়সের লাখো মুসলমান।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবারের রোজার ঈদের প্রধান জামাত হয়। সেখানে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমীন।

নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। ইমাম বলেন, ‘‘হে আল্লাহ! সর্বপ্রকার বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত (রক্ষা) করুন।”

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তার পরিবারের নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন।

“মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যাদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তাদের শাহাদত কবুল করে নিন। বেঁচে থাকা মুক্তিযুদ্ধাদের সুস্থ জীবন দান করুন।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত তিন বছর ঈদ জামাতেও ছিল কোভিড বিধির কড়াকড়ি। ঈদ জামাতে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা ছিল। কোলাকুলিতেও ছিল মানা।

এবার ঈদ জামাত ফিরেছে পুরনো মেজাজে। নামাজ শেষে কোলাকুলি আর করমর্দনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবাই।

মহামারীর কারণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত তিন বছর বঙ্গভবনেই ঈদের নামাজ সেরেছেন। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ ঈদের নামাজটি তিনি জাতীয় ঈদগাহেই পড়েছেন।

রাষ্ট্রপতি ঈদগাহে পৌঁছালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।

মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শামিল ছিলেন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে। এবার একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

ঈদের আগের দিন শুক্রবার বিকেলে দমকা বাতাস ও এক পশলা বৃষ্টিতে তপ্ত রাজধানী পেয়েছে শীতল পরশ। ঈদের দিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।

তবে শনিবার সকালে ঈদের নামাজে বাগড়া দেয়নি বৃষ্টি। রোদেলা সকালে অস্বস্তিকর গরমও ছিল না। প্রধান জামাতে অংশ নিতে সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই মানুষ আসতে থাকে জাতীয় ঈদগাহে।

মাঠ পরিপূর্ণ হলে প্রতিবারের মতই কদম ফোয়ারার চারিদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম পাশের সড়ক, শিক্ষা ভবনের পশ্চিম পাশের সড়কে জায়নামাজ বিছিয়ে অনেকে নামাজে দাঁড়ান। ঈদ জামাতে অংশ নেয় ছেলে-বুড়ো সব বয়সের মানুষ।

প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে নিরাপত্তার বন্দোবস্তুও ছিল।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে ঈদগাহ এলাকায়।

প্রতিবছরের মত এবারও ঈদুল ফিতরের দিনে পাঁচটি জামাত হবে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। সকাল ৭টায় সেখানে প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ঈদ জাতীয় উৎসবে রূপ নেয়। ঈদে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে। মাঝখানে একদিন নির্বাহী আদেশে বিশেষ ছুটি ঘোষণা করায় শবে কদরের ছুটি মিলিয়ে এবার ঈদে ছুটি মিলেছে টানা পাঁচ দিন।

ঈদযাত্রায় অন্যান্য বছরের মত ভোগান্তির খবর তেমন আসেনি; দীর্ঘ যানজটও হয়নি সেভাবে। ঈদের আগে বড় দুর্ঘটনার খবরও এসেছে তুলনামূলক কম।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবার শেষবারের মত দেশবাসীর উদ্দেশে ঈদের শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন মো. আবদুল হামিদ, টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ঈদের ঠিক পরদিন অবসরে যাচ্ছেন তিনি।

সবাই যেন ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে, সেজন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে সমাজের সচ্ছল ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, “মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে- পবিত্র ঈদুল ফিতরে এ আমার প্রত্যাশা “

রাষ্ট্রপতি বলেন, “সব ভেদাভেদ ভুলে এ দিন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-এ প্রত্যাশা করি।”

কুসংস্কার পরিহার করে ইসলাম ধর্মের শান্তির বার্তা প্রতিষ্ঠার উপর ঈদের শুভেচ্ছা বাণীতে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশবাসীকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, “আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।”

সরকারপ্রধান বলেন, “ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক।

“বিশ্বের সকল মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।”