গত ১২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে 'যমুনা নদীকে ছোট করার চিন্তা' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড নথি জমা দিয়ে বলেছে, এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
Published : 12 Jun 2023, 04:09 PM
যমুনা নদীকে সরু করার কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি এবং হবেও না, হাই কোর্টকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ কারণে সরকারি সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দয়ের রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত।
সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
যমুনা নদী ছোট করার পরিকল্পনা নিয়ে যে আলোড়ন উঠেছিল, সেটিকে ‘ভুল ধারণাপ্রসূতও’ বলা হয়েছে ওই আদেশে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে অরবিন্দ কুমার রায় আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজওয়ার পার্থ।
রিট আবেদন খারিজের কথা জানিয়ে মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আইনজীবী আদালতকে জানান, সরকার যমুনা নদীকে ছোট করার কোনো পরিকল্পনা নেয়নি এবং নেবেও না।
যমুনা ‘ছোট করার’ পরিকল্পনার সব নথি চাইল হাই কোর্ট
যে প্রকল্পের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছিল, সেটির বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে তিনি বলেন, প্রকল্পটি পাসও হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়, দুই পক্ষের শুনানি শুনে বিচারক বলেন, “যেহেতু প্রকল্প এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং সরকার পক্ষ নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে যমুনা নদী ছোট করার কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি বা হবে না, সেহেতু অসদাচরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই এবং বিষয়টি ভুল ধারণাপ্রসূত। সে কারণে আদেশটি খারিজ করেছেন আদালত।”
আগের দিন আদালতে সব নথিপত্র জমা দেন অরবিন্দ। সেখনে জানানো হয়, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) ফর যমুনা রিভার সাসটেইনবল ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট-১ নামে সেই প্রকল্পে যমুনা নদী সংকোচনের কোনো পরিকল্পনার কথা উল্লেখ নেই।
সেই প্রকল্পের আওতায় নদী বিষয়ে মহাপরিকল্পনা করার কথা আছে। সেই পরিকল্পনার আলোকে নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ভবিষ্যৎ কৌশল কর্মপরিকল্পনা ও অবকাঠামো পরিকল্পনা করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এএইচওয়াইডিটেক জিওমরফিক লিমিটেড অ্যান্ড সিইজিআইএস ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত অবকাঠামো বাস্তবায়নের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানি কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং জীববৈচিত্র ও বাস্তুসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য স্থাপনার ওপরও এর কোনো বিরূপ প্রভাব থাকবে না বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।
গত ১২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে 'যমুনা নদীকে ছোট করার চিন্তা' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে এইচআরপিবি নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন।
পরে ২৮ মে এই প্রকল্পের নথি তলব করে হাই কোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে সব পরিকল্পনা আদালতে জমা দিতে বলা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যমুনা নদী প্রতি বছর বড় হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় তা ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় নদীর প্রয়োজন নেই। এটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয় বলেও সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সভায় প্রকল্পে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব করা নিয়েও প্রশ্ন তোলে কমিশন।