জন্মদিনের কথা বলে নারী চিকিৎসককে হোটেলে নিয়ে খুন করেন স্বামী: র‌্যাব

র‌্যাব বলছে, অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রেজা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2022, 08:58 AM
Updated : 12 August 2022, 08:58 AM

ঢাকার পান্থপথের আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গী রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেপ্তার করার পর র‌্যাব জানিয়েছে, দুই বছর আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিলেন তারা।

কিন্তু রেজার সঙ্গে অন্য নারীর সম্পর্কের কথা জান্নাত জেনে ফেলায় তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছিল। এর মধ্যে জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে ১০ অগাস্ট স্ত্রীকে নিয়ে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলে ওঠেন রেজা। সেখানে জান্নাতকে গলা কেটে হত্যার কথা তিনি ‘স্বীকার করেছেন’ বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

বুধবার রাতে ওই হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে পুলিশ ২৭ বছর বয়সী জান্নাতের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে।

মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গাইনি বিষয়ে একটি কোর্সে করছিলেন জান্নাত। আর রেজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছিলেন।

তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছিল জান্নাতের পরিবার। রেজাকে আসামি করে বৃহস্পতিবারই একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ওই তরুণীর বাবা।

ছায়া তদন্তে নেমে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও, মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকার একটি মেস থেকে ৩১ বছর বয়সী রেজাকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব।

এরপর শুক্রবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ওই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ফেইসবুকে পরিচয় থেকে দুজনের পরিচয় হয় এবং পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা পরিবারের অগোচরে কাজী অফিসে বিয়ে করে ফেলেন।

“তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতেন। এর মধ্যে একাধিক নারীর সাথে রেজার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানতে পেরে জান্নাত আলাপের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

“এ নিয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হত। তাই রেজা এক পর্যায়ে তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জান্নাতকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।”

রেজা র‌্যাবকে বলেছেন, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন তিনি। এমবিএ চলাকালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকেও চাকরি করেন কিছুদিন। সর্বশেষ গত জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জান্নাতের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে ১০ অগাস্ট সকালে তাকে নিয়ে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলে ওঠেন রেজা। স্ত্রীকে খুন করার উদ্দেশ্যে ব্যাগে করে তিনি ছুরি নিয়ে যান।

“সেখানে অন্য নারীর সঙ্গে রেজার সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এক সময় রেজা তার ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে জান্নাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হন। তারপর জান্নাতের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে থেকে ওই কক্ষে তালা দিয়ে চলে যান।”

র‌্যাব বলছে. হোটেল থেকে বেরিয়ে রেজা প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একটি হাসপাতালে যান। ধস্তাধস্তিতে তার হাত কেটে গিয়েছিল, সেখানে সেলাই করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে চলে যান।

এদিকে রেজা না ফেরায় হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। বুধবার রাতে পুলিশ গিয়ে ওই ঘরে জান্নাতের গলা কাটা লাশ পায়।

চট্টগ্রাম থেকে রেজাকে গ্রেপ্তারের সময় হত্যাকাণ্ডের সময় তার পরনে থাকা রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং জান্নাতের মোবাইল উদ্ধার করার কথা জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজা তার স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।”