“আশা করছি অচিরেই তারা আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর ধর্মনিরপেক্ষ এক মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে।”
Published : 19 Jan 2024, 09:20 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ প্রথমবারের মত রাজাকারমুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেছেন, “এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ সম্পূর্ণভাবে রাজাকারমুক্ত হয়েছে। তারপরও আমাদের আন্দোলনের গুরুত্ব ও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।”
শুক্রবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। নির্মূল কমিটির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩, জাতীয় পার্টি ১১, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, কল্যাণ পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে। বাকি একটি আসনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে।
লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, “১২ দিন আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াত জোট এই নির্বাচন বয়কট করলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি দল এবং কয়েক শ’ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। অতীতের তুলনায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।”
তিনি বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই’- এই দাবিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ নামে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানি হাই কমান্ড ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিচারের নির্মূল কমিটিকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদে যেহেতু কার্যকর বিরোধী দল নেই- জাতীয় সংসদের বাইরে নির্মূল কমিটি এবং সমমনা নাগরিক সংগঠন ও উদ্যোগগুলোকে বিরোধী দলের দায়িত্বও পালন করতে হবে।
“জবাবদিহিতার জায়গা না থাকলে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে-এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়; কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যা কাম্য হতে পারে না।”
নির্মূল কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “যে কাজগুলো করলে দেশ ও দশের উন্নতি হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হয়- তা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে করতে হবে।”
মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হিন্দু জনসাধারণের উপর যে বর্বর আক্রমণ চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়েছিল নির্মূল কমিটি। …নির্মূল কমিটির আন্দোলন সংগ্রাম এখনও চলমান।
“আশা করছি অচিরেই তারা আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর ধর্মনিরপেক্ষ এক মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে।”
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মূল কমিটির আন্দোলনের দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করে বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতি সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে। চাইলেই এখন কেউ যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করতে পারবে না।
“এখন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির দায়িত্ব তরুণদের নিতে হবে। তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।”
নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, একাত্তরে যেসব দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তারা আজও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপিকে শুধু সমর্থনই নয়; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে মদদ জোগাচ্ছে।
“দেশবাসী নিশ্চয়ই দেখেছেন কীভাবে অতীতের মতোই বিএনপি-জামায়াত চক্র দেশের মানুষ, সম্পদ, সব রকম উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশকে পিছিয়ে দেবার জন্যে, উন্নতি ব্যাহত করার জন্যে যা কিছু দরকার সব চালিয়ে যাচ্ছে।”
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ লেখক সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারের কন্যা নির্মূল কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীনির্ভর বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার বাড়াতে হবে- যেন তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারে।”
সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সদস্য সচিব মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তপন পালিত। সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর।