ভোটের সময় সংবাদ সংগ্রহে নির্বাচন কমিশন প্রণীত ‘সাংবাদিক নীতিমালা’ আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনে সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নীতিমালা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই’ বলেও সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
ভোটের সময় মোটরসাইকেল চলাচল এবং ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞাসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা জারির পরদিন এ আশ্বাস দিলেন সিইসি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা চায়, সুশৃঙ্খল, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, সেটাই চায়।
“সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা সকল বিষয়ে একটা শৃঙ্খলা বিধানের চেষ্টা করব। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই জিনিসটা মাথায় রেখেই হয়ত নীতিমালাটা করেছি। তারপরও যেহেতু আপনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজটা করবেন, আপনাদের মতামতগুলো নিয়ে আমরা বসে আরো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব এবং আপরাদেরকে যথা সময়ে অবহিত করব।"
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের প্রায় আট মাস আগে সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে ইসি।
এই নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত কার্ডধারীদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে অন্তত এক ডজন নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
সেখানে বলা হয়েছে, ভোটের দিন যাতায়াতের জন্য একটি গণমাধ্যমকে ‘যৌক্তিক সংখ্যক’ গাড়ির স্টিকার দেওয়া হবে। তবে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করা যাবে, তবে কোনক্রমেই গোপন কক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করা যাবে না।
এক সঙ্গে দুইয়ের বেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে ঢুকতে করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না।
ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না। ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।
সাংবাদিকরা ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
সাংবাদিকদের উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি।
ভোটকক্ষ থেকে ফেইসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না।
এই নীতিমালার কয়েকটি বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সাংবাদিকদের মধ্যে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে, কারণ ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল খুবই সহায়ক বাহন।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “আমরা সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য একটা নীতিমালা জারি করেছি। এটা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমরা মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছি। বিষয়টা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি।"
যদি প্রয়োজন হয়, ওই নীতিমালায় সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা যাবে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা নিজেরদের মধ্যে আরো আলোচনা করব। এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সকল মতামত বা সমালোচনা আসবে বা এসেছে, সেগুলো আমরা বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখব যে নীতিমালায় কোনো অধিকতর সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা।
“সে বিষয়গুলো আমরা দেখে যথা সময়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।"
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও একডজন নির্দেশনাসহ সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা করা হয়েছিল। তখনও মোটর সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে পরে সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের ছাড় দেওয়া হয়।