বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি? গবেষকের ভিন্নমত

মীর ফজলুল করিম বলছেন, একটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করার জন্য একটি মডেলই যথেষ্ট নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:15 PM
Updated : 4 Dec 2022, 03:15 PM

বাংলাদেশ ও তার আশপাশের অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণার ‘বিপরীতে’ মত দিয়েছেন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সাবেক পরিচালক মীর ফজলুল করিম।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক সেমিনারে তিনি বলেন, “বস্তুতপক্ষে এই উপমহাদেশে গত সাড়ে চারশ বছরের ঐতিহাসিক ডেটা, ভূতাত্ত্বিক অবস্থান, বিশ্লেষণ, প্লেটের অবস্থান, প্লেটের গতি ও অন্যান্য নিয়ামক বিবেচনায় এত বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত না হবারই কথা।”

২০১৬ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূ-পদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলারের ‘লকড অ্যান্ড লোডিং মেগাথ্রাস্ট লিংকড টু অ্যাকটিভ সাবডাকশন বিনেথ দ্য ইন্দো-বার্মান রেঞ্জেস’ শিরোনামের এক গবেষণায় বলা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান, সেখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।

বিশেষ করে, ঢাকার নিচে মেগাথ্রাস্ট ফল্টের অবস্থান একটি মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছিলেন স্টেকলার।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ভূমিকম্প গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান জিওইস্টার্ন ইনকরপোরেটেডের প্রকৌশল ভূতত্ত্ববিদ মীর ফজলুল করিম এর বিপরীতে মত তুলে ধরেন রোববারের সেমিনারে।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) ও ভূবৈজ্ঞানিক সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (জিএটিসি) উদ্যোগে ভূমিকম্প গবেষণা, ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ওপর এ সেমিনার হয়।

‘ম্যানেজিং আর্থকোয়েক ডেটা অ্যান্ড ইনফরমেশন অব বাংলাদেশ: অ্যা ক্রিটিক্যাল ন্যাশনাল ইস্যু’ শিরোনামে একটি জরিপ গবেষণার মাধ্যমে মীর ফজলুল করিম তার যুক্তি ও বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “৯ মাত্রার ভূমিকম্প ৮ বিলিয়ন টন বিস্ফোরকের সমতুল্য। আমরা বৈধতা ছাড়া একটি সমীক্ষা গ্রহণ করতে পারি না। বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করার জন্য এই একটি মডেলই যথেষ্ট নয়।”

স্টেকলারের গবেষণার ফলাফলের বিপরীতে যুক্তি উপস্থাপন করে ফজলুল করিম বলেন, ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলের ভূমিকম্পটি দেশের সর্বোচ্চ মাত্রার (৭ দশমিক ৫) ভূমিকম্প। এরপর থেকে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টিকারী কোনো সিসমোজেনিক কাঠামো পাওয়া যায়নি।

ভূমিকম্পের প্রস্তুতি, অবকাঠামো নির্মাণ, মেগা প্রকল্প ও টেকসই নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও নিবিড় গবেষণার প্রয়োজন বলেও মত দেন এ গবেষক।

তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও দক্ষ গবেষক তৈরিসহ সরকারিভাবে সমন্বয় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভূমিকম্পসহ নগর নির্মাণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সতর্কতা, এই বিষয়ে গবেষণা ও করণীয় কর্তব্যের উপরে জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর অ্যাকাডেমিশিয়ান, পলিসি-মেকার, নির্মাণ প্রকৌশলী ও অন্যদের সাথে নিয়ে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।”

জিএসবির উপমহাপরিচালক আবদুল বাকী খান মজলিশসহ কয়েকজন ভূতত্ত্ববিদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।