ফুটবল-মৈত্রীর জয়গানে ঢাকায় খুলল আর্জেন্টিনা দূতাবাস

“সংস্কৃতি, ফুটবল, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক এবং একাত্তরে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি বাংলাদেশের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সম্পর্ককে জীবন্ত রেখেছে,” বলেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 02:48 PM
Updated : 27 Feb 2023, 02:48 PM

রাস্তার পাশের ফুটপাতে বড় স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের নৈপুণ্য আর বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমিদের বাঁধভাঙা উদযাপন। বনানীর ওই সড়কের অপরপ্রান্তে ফুটপাতে ছিলেন শ খানেক উৎসুক দর্শক; তাদের কারও কারও পরনে ছিল আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের আকাশি-সাদা জার্সি। 

সোমবার বিকালে সেই বড় স্ক্রিনের পাশে স্থাপন করা দণ্ডে আর্জেন্টিনার পতাকা উত্তোলন করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো কাফিরো ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ৪৫ বছর পর ঢাকায় পুনরায় চালু হল আর্জেন্টিনার দূতাবাস। 

শুধু উদ্বোধনে নয়, ঢাকায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসের এই নব সূচনার পুরো আয়োজনে ছিল ফুটবলমৈত্রীর বন্দনা। 

১৯৭৮ সালে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস বন্ধ হয়ে গেলেও ফুটবল ঘিরে মানুষের বন্ধন টিকে থাকার কথা তুলে ধরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, “এই সময়ে কী ঘটে গেছে যে বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে আমাদের জাতীয় দলের জন্য উল্লাস করে গেছে? এরকম আমাদের প্রত্যাশাও ছিল না। অথচ বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করে গেছে! 

“এর কারণ হচ্ছে, মানুষ কখনো ভোলে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভোলেনি। পৃথিবীকে তারা দেখিয়েছে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা। আর সেই কারণে আমরা বিনয়ের সঙ্গে এখানে এসেছি, সেই ভালোবাসার প্রতি সুবিচার করতে এবং আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মাধ্যম হিসাবে পুনরায় দূতাবাস চালু করছি।” 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে রয়েছে এমন বিশেষ সম্পর্ক যা রাজনীতি ও কূটনীতির সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিশ্বকাপের সময় লাখ লাখ বাংলাদেশি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলকে সমর্থন করেছে এবং এটা আমাদের জনগণকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। 

“ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও বন্ধুপ্রতীম দুদেশের মানুষ আন্তরিক বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার মিশন পুনরায় চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।” 

পতাকা উত্তোলনের পর ইনস্টার লিমিটেড নামের ওই ভবনের দোতলায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসের নামফলক উন্মোচন করেন কাফিরো ও শাহরিয়ার। 

দুদেশের জাতীয় সংগীতের পর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় দূতাবাস। স্মারক হিসাবে সেই ফিতার অংশবিশেষ উপস্থিত কয়েকজনের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিরো। 

সংস্কৃতি, ফুটবল, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক এবং একাত্তরে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি বাংলাদেশের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সম্পর্ককে জীবন্ত রেখেছে বলে মন্তব্য করেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

“সাংস্কৃতিক ভিন্নতার পরও যেসব বিষয় আমাদের সম্পর্ককে ঐক্যবদ্ধ রাখে, সেসব ব্যানার উঁচু করে ধরতে হবে আমাদের। সেটাই হতে পারে আমাদের সম্পর্ক তৈরির ভিত্তি,” বলেন সান্তিয়াগো কাফিরো। 

তিনি বলেন, “অনিশ্চয়তা ও যুদ্ধের এই সময়ে বিশ্বকাপ ও আর্জেন্টিনার জন্য বাংলাদেশের এই ভালোবাসা বিশ্বের দক্ষিণ প্রান্তকে শক্তিশালী করার এবং মানুষের মর্যাদাকে সবার আগে স্থান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই দেখিয়েছে।” 

সান্তিয়াগো কাফিরোকে উদ্দেশ করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “এ সফরে আপনি আমাদের হৃদয়ে আর্জেন্টিনার বিশেষ অবস্থানের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন। 

“যেভাবে আমরা সর্বকালের সেরা দিয়াগো মারাদোনাকে ভক্তি করেছি, সেভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম পেয়েছে আরেক নায়ক লিওনেল মেসিকে। একটা বিষয়, যেটা কখনো পরিবর্তন হয়নি, সেটা হলো আর্জেন্টিনার ফুটবলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা।” 

স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ; এরপর ঢাকায় দেশটির দূতাবাস খোলা হলেও ১৯৭৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গতবছরই ঢাকায় দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেয় আর্জেন্টিনা। 

ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার মধ্যে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিরো। 

আর কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফের্নান্দেজকে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বিশ্বকাপের ডামাডোলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে লেখা উত্তরে দূতাবাস খোলার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দেজ। 

সেই প্রতিশ্রুতির তিন মাসেরও কম সময়ে সোমবার মিশন চালু হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “মানুষ কীভাবে তার দেশের সরকারকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটা। কালক্ষেপণ না করেই দুদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লিতে আর্জেন্টিনার দূতাবাস তিন মাসের কম সময়ে এটা সম্ভব করেছে।”