তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ‘অধিকার’ এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা আপিল ও জামিন শুনানিতে বিচারকের ওই মন্তব্য আসে।
Published : 10 Oct 2023, 10:54 PM
একটি মামলার শুনানিতে হাই কোর্টের এক বিচারকের করা মন্তব্যকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
মঙ্গলবার তিনি নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতি এমদাদুল হক এমন অসাংবিধানিক মন্তব্য করে শপথ ভঙ্গ করেছেন।”
‘বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সুবিধার্থে’ বিচারক ওই মন্তব্য করেছেন কি না এবং তাদের সঙ্গে তার কোনো ‘যোগসূত্র’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা আপিল মঙ্গলবার শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এমদাদুল হকের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ। পাশাপাশি তাদের জামিনও মঞ্জুর করে আদালত।
ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদিলুর ও এলানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত।
রায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়, যা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আদিলুর ও এলানের আপিল ও জামিন আবেদনের পক্ষে মঙ্গলবার হাই কোর্টে শুনানি শুরু করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাইলে আদালত তাকে থামিয়ে দেন।
তখন আসামিদের আইনজীবী বক্তব্য দিলে আদালত জামিনের আবেদন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চায়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম আবার জামিনের বিরোধিতা করলে বিচারক বলেন, “তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না?”
এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, “দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।”
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের এই মন্তব্যের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবহিত করা হয়েছে।
“সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়া একজন বিচারপতির এমন অসাংবিধানিক মন্তব্য খুবই দুঃখজনক,” বলেন এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, “বিচারপতি এমদাদুল হক যখন এই মন্তব্য করেছেন, তখন আমি ওই বেঞ্চের আদালতে উপস্থিত ছিলাম না। আমি সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ থেকে তার মন্তব্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকেও শুনেছি। বিচারপতি এমন মন্তব্য করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
“বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারপর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তার কাছে মন্তব্যের প্রতিবেদন সম্বলিত সংবাদের ক্লিপিংস হস্তান্তর করেছি।”
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
দিনভর সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে ‘অধিকার’ তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী আদিলুরকে মামলা দায়েরের দিন ১০ অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অধিকারের কার্যালয়েও চলে পুলিশের তল্লাশি। আদিলুর দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান। এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরদিন মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাজার রায় আসার পর থেকে আদিলুর ও এলানের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে আসছিল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন।
আরও পড়ুন