শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মামলায় এ দুজনের দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
Published : 10 Oct 2023, 01:29 PM
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাই কোর্ট।
সেইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ স্থগিত করে তাদের জামিন মঞ্জুর করায় এখন তাদের কারামুক্তিতে আর বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
আদিলুর ও এলানের আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মো. আহসানুজ্জামান ফাহিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম।
পরে আইনজীব রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতত তাদের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই । তবে রায়দানকারী আদালতে জামিননামা (বেইলবন্ড) জমা দিতে হবে। আমরা দ্রুতই সেটি জমা দেওয়ার চেষ্টা করব। তার আগে উচ্চ আদালতের জামিনের আদেশের কপি সংগ্রহ করব। হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে আদেশটি নামতে সময় লাগবে। তারপরে কারাগার থেকে তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা।”
ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত।
রায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়, যা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
দিনভর সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে ‘অধিকার’ তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী আদিলুরকে মামলা দায়েরের দিন ১০ অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অধিকারের কার্যালয়েও চলে পুলিশের তল্লাশি। আদিলুর দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান। এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরদিন মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাজার রায় আসার পর থেকে আদিলুর ও এলানের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে আসছিল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন।