র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা না উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, বলছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
Published : 25 Jun 2023, 08:52 PM
জাতীয় নির্বাচনের আগে পশ্চিমা দেশগুলো নানা প্রশ্ন তুললেও তাতে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন না পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি মনে করেন, ২০১৪ সালে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে ফেলার পর পরিস্থিতি যেভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে, তাতে এখন আর সরকারের কিছুতেই ভয় নেই।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি বিলোপের পর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ভোট ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তাতে সফল হয়নি তারা।
অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুলেছিল; তবে তা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি।
তার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলোও অংশ নিয়েছিল; যদিও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা।
এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে আবার বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছে পশ্চিমা কূটনীতিকরা। অবাধ নির্বাচনে বাধা হবে, এমন ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার বিধান রেখে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতিও প্রণয়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার চাপ অনুভব করছে কি না- সেই প্রশ্ন করা হয় রোববার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ আসা প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারকে।
জবাবে তিনি বলেন, “অনেকের শঙ্কা ছিল দশম সংসদ বেশি দিন টিকবে কি না? কিন্তু সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগ দিন পর্যন্ত খুবই গতিশীল অবস্থায় সময় পার করেছে।
“আমরা কিন্তু নির্বিঘ্নে সরকার পরিচালনা করেছি। সরাসরি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে… ওটাতে যদি আমরা চাপ অনুভব না করি, বর্তমান সময়ে আমরা কোনো কিছুতে চাপ অনুভব করছি না।”
সময়ের আগে সরকারের পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে শাহরিয়ার বলেন, “আমরা সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের ম্যান্ডেট যতদিন আছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাবে, কাজ করে যাবে দ্ব্যর্থহীনভাবে এবং যে সময়ে নির্বাচন কমিশন তাদের তফসিল ঘোষণা করবে, যেদিন থেকে নির্বাচন কমিশনেরে আওতাধীন বিষয়বস্তুগুলো হয়ে যাবে, সেদিন সরকার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
“এখানে থমকে যাওয়া, ফিরে দেখা বা কোনো সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ভীতি তো অনেক দূরের কথা, আওয়ামী লীগ সরকার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার অভিধানে ভীতি শব্দটি নেই।”
বিএনপি এবার আবার বলছে, নির্দলীয় সরকার না হলে নির্বাচনে যাবে না তারা। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালের মতো, নাকি ২০১৮ সালের মত নির্বাচন হবে- সেই প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে।
তিনি বলেন, “২০১৪ ও ২০১৮ মডেল হতে পারে না। এটা নিয়ে আমাদের খেদ আছে, আপনারা পরিষ্কারভাবে জানেন।”
২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পেছনে বিএনপিকে দায়ী করে শাহরিয়ার বলেন, “২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, কারণ জামায়াত আসতে পারছিল না, তাদের জন্য ৫ শতাংশ ভোট ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
“’১৮ সালে তাদের একটি নেতৃত্বশূন্য অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগ থেকে চলে যাওয়া একজন মানুষকে তারা নেতা হিসাবে দাঁড় করিয়েছিলেন। সেটি বিএনপির আভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বা হয়নি। এটা যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বুঝতে পারেন, বলতে পারেন।”
“কে আসল বা কে আসল না, ২০২৩ বা ২৪’র ডিসেম্বর বা জানুয়ারি যে সময়ে হোক না কেন, এই নির্বাচন যেন অবাধ হয়, সুষ্ঠ হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, এটা করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা সেটা করব ইনশাল্লাহ,” বলেন তিনি।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সরকার দেশটির সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো এক দেশের বা দুই দেশের কার্যক্রমে থমকে যাওয়া ঠিক হবে না।
“আপনারা দেখবেন যে, একই ধরনের বার্তা, বডি ল্যাংগুয়েজ আর কারও কাছ থেকে পেয়েছেন কি না? উত্তর হবে- ‘না’।
“এবং আমরা আশা করি, আমরা আপনাদের দিতে পারব, যদি এতে কিছু যায় আসে না, তারপরেও বলব যে, এখানেও আপনারা উন্নতি দেখবেন। আমরা এঙ্গেজড, আমরা কাজ করছি।”
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে
র্যাবের কার্যক্রমে ‘প্রভূত উন্নতি’ সত্ত্বেও এই বাহিনীর উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা না উঠলে দেশটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “র্যাব প্রশ্নে সেদেশের প্রতিনিধিরাই বলেছেন, গত দুই বছরে বেশ উন্নতি করেছে। তাই যদি হয়, তাহলে আপনার উচিৎ হবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দিকে ধাবিত হওয়া।
“আমরা কিন্তু সেটা আদায় করেই ছাড়ব। কারণ, উই হ্যাভ ডেমনেস্ট্রেটেড সিগনিফিক্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট। তো, একটা বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে এঙ্গেজড হওয়ার পরে, যখন তারাই স্বীকার করছে এখানে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, আমরাও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতির দাবি করছি, সংখ্যা, তথ্য ও গবেষণা বলছে- এখানে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
“তারপরেও যদি এটা প্রত্যাহার না হয়, কোনো একদিন আমরা সিদ্ধান্তে আসব যে, এটার পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? তখন আমরা আরও উচ্চকণ্ঠে ও পরিষ্কারভাবে বলব।”
এইচআরডব্লিউ ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “তাদের ওপর দায়িত্ব বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার। কিন্তু তারা কোনো এক অদ্ভুত কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় থেকে অদ্যাবধি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”
সংঘাতপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের ‘দেশের শত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী বা সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে শান্তিরক্ষী বাহিনী, যেটা গোটা পৃথিবীতে অব্যাহতভাবে গত ১০ বছর, মাঝে দুই-এক বছর বা দিয়ে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী ছিল।
“প্রায় ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। আহতদের সংখ্যা বাদ দিলেও, এই অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন বা এই অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা যারা করছেন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, তারা বাংলাদেশের শত্রু। এক্ষেত্রে কংগ্রেসম্যান বা সেনেটর বা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেই হন না কেন, তারা আমাদের শত্রু।”
“এবং তাদেরকে যারা প্রভোক করেছেন পয়সা দিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সময় এসেছে, তারাও যে বাংলাদেশের শত্রু এটা চিনে নেবার,” বলেন তিনি।