এদের মধ্যে দুইজনের নাম মামলার এজাহারে নেই; তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দুইজনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।
Published : 02 Mar 2024, 07:56 PM
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
পরে মহানগর হাকিম নুরুল হুদা চৌধুরী শুনানি শেষে তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজামউদ্দিন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রিমান্ডের নেওয়ার তথ্য জানান।
রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন-ভবনটির নিচতলায় থাকা চা-কফির দোকান চুমুক রেস্তোরাঁর দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন, কাচ্চি ভাই এর বেইলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসান ও গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল।
শুনানিতে গ্রেপ্তারদের পক্ষ থেকে রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করা হয়। তাদের আইনজীবীরা বলেন, তারা সাধারণ কর্মচারী ভবনের মালিক নন। এ ভবনে রেস্তোরাঁ দেওয়ার অনুমোদন ছিল কি না তা তাদের জানার কথা নয়।
এর আগে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে।
অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে।
মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে চারজনকে। এদের মধ্যে রিমান্ডে যাওয়া চারজনের মধ্যে দুইজন আনোয়ারুল হক ও মুন্সি হামিমুল আলম বিপুলের নাম রয়েছে।
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহ্ আলম মোঃ আখতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রিমন ও জিসানকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার চারজনের বাইরে এজাহারে আসামির তালিকায় আসা বাকি দুইজন হলেন- আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের স্বত্ত্বাধিকারী (নাম দেওয়া হয়নি) এবং কাচ্চি ভাইয়ের মালিক সোহেল সিরাজ।
পুলিশ কর্মকর্তা আখতারুল জানান, আমিন মোহাম্মদের স্বত্ত্বাধিকারী ও সোহেল গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে চারজনের মধ্যে আনোয়ারুল, শফিকুর ও জয়নুদ্দিনকে শুক্রবার রাতে এবং হামিমুলকে শনিবার ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আগুনের সূত্রপাত হিসেবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নীচতলায় অবস্থিত ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে সংগৃহীত একটি ভিডিওকে তদন্তের বড় আলামত হিসেবে দেখছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনে নিচ তলায় আগুন লেগেছে, আর তা নেভানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। আগুনের সূত্র খুঁজতে গিয়ে এটি পাওয়া যায়। এটি স্থানীয় লোকজন আমাদের দিয়েছে। আমাদের করা ভিডিও না।
“এটি একটি সূত্র, তবে চূড়ান্ত নয়। তদন্তের সময় অনেকের সাথে কথা বলতে হবে, আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপরেই বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা।”
ভবনটির নিচতলায় চা-কফির দোকান ‘চুমুক’, জুসের দোকান শেকহোলিক, মোবাইল ফোনের দোকান গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, স্যামসাংসহ আটটি দোকান ছিল। দ্বিতীয়তলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা। রেস্তোরাঁটিতে ৫০ শতাংশ ছাড় থাকায় সেখানে ‘অসম্ভব’ ভিড় ছিল বলে রাতে সোহেল আকবর নামের একজন জানিয়েছিলেন।
তৃতীয় তলায় ছিল পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েনের বিক্রয়কেন্দ্র। চতুর্থতলায় রেস্তোরাঁ ‘খানা’স’ ও ‘ফুওকো’, পঞ্চমতলায় রেস্তোরাঁ ‘পিৎজা ইন’, ষষ্ঠতলায় রেস্তোরাঁ ‘জেস্টি’, ‘স্ট্রিট ওভেন’ ও পোশাক ব্র্যান্ড ‘ক্লোজেস্ট ক্লাউড’ ও সপ্তমতলায় ছিল রেস্তোরাঁ ‘হাক্কা ঢাকা’ ও ‘অ্যামব্রোসিয়া’। আর অষ্টমতলায় স্টাফ রুম ও নামাজঘর ছিল।
আরও পড়ুন:
বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় পুলিশের মামলা