বেইলি রোডে আগুনের সূত্রপাত চা-কফির দোকানে?

ভবনটিতে অন্তত ৮টি রেস্তোরাঁ ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2024, 02:02 PM
Updated : 1 March 2024, 02:02 PM

রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে একটি ভিডিওকে তদন্তের বড় আলামত হিসেবে দেখছে ফায়ার সার্ভিস।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনে নিচ তলায় আগুন লেগেছে, আর তা নেভানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।

শুরুতে দোতলার খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ থেকে আগুন লেগেছে বলে অনেকেই ধারণা করলেও তা ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। আগুনের সূত্র খুঁজতে গিয়ে এটি পাওয়া যায়। এটি স্থানীয় লোকজন আমাদের দিয়েছে। আমাদের করা ভিডিও না।

“এটি একটি সূত্র, তবে চূড়ান্ত নয়। তদন্তের সময় অনেকের সাথে কথা বলতে হবে, আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপরেই বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা।”

র‌্যাব মহাপরিচালক খুরশীদ আলমও বলছেন, “নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। তবে পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।”

ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেছেন, “নিচ তলার চুমুক রেস্টুরেন্ট থেকে আগুন লাগে। তাদের রান্না ঘর ঠিক আছে। আর এটা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।”

ভবনটির নিচতলায় চা-কফির দোকান ‘চুমুক’, জুসের দোকান শেকহোলিক, মোবাইল ফোনের দোকান গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, স্যামসাংসহ আটটি দোকান ছিল। দ্বিতীয়তলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা। রেস্তোরাঁটিতে ৫০ শতাংশ ছাড় থাকায় সেখানে ‘অসম্ভব’ ভিড় ছিল বলে রাতে সোহেল আকবর নামের একজন জানিয়েছিলেন।

তৃতীয় তলায় ছিল পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েনের বিক্রয়কেন্দ্র। চতুর্থতলায় রেস্তোরাঁ ‘খানা’স’ ও ‘ফুওকো’, পঞ্চমতলায় রেস্তোরাঁ ‘পিৎজা ইন’, ষষ্ঠতলায় রেস্তোরাঁ ‘জেস্টি’, ‘স্ট্রিট ওভেন’ ও পোশাক ব্র্যান্ড ‘ক্লোজেস্ট ক্লাউড’ ও সপ্তমতলায় ছিল রেস্তোরাঁ ‘হাক্কা ঢাকা’ ও ‘অ্যামব্রোসিয়া’। আর অষ্টমতলায় স্টাফ রুম ও নামাজঘর ছিল।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যেখানে পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক ছালেহ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মাত্র একটি সিঁড়ি ও ভবনের একটি ছাড়া প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে খাবারে দোকান থাকায় গ্যাস সিলিন্ডারগুলো রাখা ছিল অপরিকল্পিতভাবে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভবনের নকশা অনুমোদন করা আছে, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদনও আছে। আগুন লাগার পরপরই রাজউকের একদল কর্মকর্তা সেখানে যায়। সেখানে তারা দেখেছেন ভবনের সিঁড়ি নকশা অনুযায়ীই ছিল। অন্য কোনো ব্যত্যয় ছিল কি না, সেটা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

“আইন অনুযায়ী কোনো ভবন ১০ তলার বেশি উচ্চতার হলে সেখানে ফায়ার এক্সিট লাগে। কিন্তু ওই ভবনটি আটতলা, তাই তারা ফায়ার এক্সিট রাখেনি। আবার একমাত্র সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার, দোকানের মালামাল রাখা ছিল। ফলে লোকজন বের হতে পারেনি।”

আশরাফুল ইসলাম বলেন, আট তলা ভবনের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ভবনটি যেহেতু বাণিজ্যিক, সেহেতু আলাদা অগ্নি নির্গমন পথ রাখা দরকার ছিল।

“কারণ আবাসিক ভবন হলে কম লোক বাস করেন, আগুন লাগলে দ্রুত নামতে পারেন। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবনে বহু মানুষ আসা-যাওয়া করে।”