“নির্বাচন নিয়ে বহু চাপ, গভীর চাপ, মধ্যম চাপ, নানা ধরনের চাপ ছিল,” বলেন মন্ত্রী।
Published : 14 Jan 2024, 05:13 PM
নানা রকমের ‘চাপ’ উৎরে নির্বাচন হয়ে গেছে মন্তব্য করে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব বোঝাপড়া থেকে বক্তব্য দিয়েছে; উন্নয়ন সহযোগীদের কোনো উদ্বেগ থাকলে সরকার সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “সবার সাথে বন্ধুত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন বন্ধুদেশের কনসার্নগুলোকে আমরা মূল্য দিই। আমরা কারো চাপ অনুভব করছি না। নির্বাচন নিয়ে বহু চাপ, গভীর চাপ, মধ্যম চাপ, নানা ধরনের চাপ ছিল। সব চাপ উৎরে নির্বাচন হয়ে গেছে।
“সুতরাং আমরা কারও কোনো চাপ কখনো অনুভব করি না। আমরা মনে করি, বিভিন্ন দেশের নানা পারসেপশন, নানা ন্যারেটিভ থাকে, আমরা সেগুলোকে ভ্যালু করি, তবে আমরা সবার সাথে একযোগে কাজ করব। দিনশেষে সবাই আমরা একযোগে কাজ করব।
গত পাঁচ বছর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে নতুন মন্ত্রীকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন হাছান মাহমুদ, যিনি এর আগে ২০০৯ সালে মাস সাতেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এমন মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে পররাষ্ট্রনীতির চললেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশগুলোর বিভক্তিকে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান।
তিনি বলেন, “বার্লিন প্রাচীর পতনের পর পৃথিবী যেভাবে মোটামুটিভাবে সবার মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, সেখান থেকে পৃথিবী একটু বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে।
“আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সাথে বন্ধুত্ব। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের যে বিভক্তি, অবশ্যই সেটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা আমাদের নীতিতে অবশ্যই অবিচল আছি এবং থাকব। সবার সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়, সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিভিন্ন দেশের পারসেপশন-ন্যারেটিভ থাকে, কিন্তু দিনশেষে সবাই আমরা একসাথে কাজ করব। এটিই হচ্ছে, মূল বিষয়, সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, সবাইকে সাথে নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন সবদেশেই ‘কমবেশি থাকে’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশেও নির্বাচনের পর নানা প্রশ্ন থাকে। এখানে ভালো নির্বাচন হয়েছে। এখানেও নির্বাচনের বিষয়ে নানা প্রশ্ন আছে।
“নির্বাচন আমাদের দেশের উৎসব। সত্যিকার অর্থে গত নির্বাচনেও সেটি হয়েছে। এবং অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহিংসতামুক্ত, কম সহিংসতা হয়েছে এই নির্বাচনে।”
বিভিন্ন রকম প্রশ্ন থাকলেও সব দেশই বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পূর্ব-পশ্চিম সমস্ত রাষ্ট্রগুলো আমাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। অভিমত প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ তারা আমাদের সাথে বা সরকারের সাথে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, এটি হচ্ছে শেষ কথা।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতিতে’ আরো জোর দেবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে। আমরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ পশ্চিমের উপর নির্ভরশীল অনেকক্ষেত্রে। আমাদের পূর্বেও বাণিজ্যের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বাজারটাকে অনুসন্ধান করতে হবে।”
এক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশেও বাজার অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “সবার সাথে সম্পর্কটা আরও গভীর করতে হবে। আর চ্যালেঞ্জ, কাজ করতে গেলে সামনে নানা চ্যালেঞ্জ আসবে, তখন আমরা সেগুলোকে মোকাবেলা করব।”
বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য রেমিটেন্স পাঠানোর পথ আরো সহজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফয়ার্স) অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।