সাক্ষ্য আইনে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, তা সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিনের।
Published : 25 Jul 2022, 09:32 PM
ভিকটিমকে প্রশ্ন বা জেরা করতে আদালতের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে সাক্ষ্য আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’ এর অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ১৪ মার্চ মন্ত্রিসভায় আইনটি তোলা হয়। তখন এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, সংশোধনে সেখানে পরিবর্তন আসছে বলে জানান তিনি।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।
আর ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এ রূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা দীর্ঘ দিন ধরে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই ঔপনিবেশিক আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
আইন সংশোধনে তাতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “কারো চারিত্রিক বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে গেলে আদালতের কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে। আদালত যদি মনে করে, কারণ সবক্ষেত্রে যদি আউটলাইন করে না দেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে খারাপ লোকজনও থাকতে পারে, যে ট্র্যাপ করে করে ভালো একজন লোককে ট্র্যাপে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই জিনিসগুলোর প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে আদালত বিবেচনা করবেন, চারিত্রিক বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে কি না।”
সাক্ষ্য আইন সংশোধনে মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনেরও সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ধর্ষণ: সাক্ষ্য আইন সংশোধনে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চায় হাই কোর্ট
ধর্ষণ: সাক্ষ্য আইনের ‘বিতর্কিত’ ধারা বাতিলে রিট আবেদন
আদালতে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ আসছে
সচিব বলেন, “(এটা করা হয়েছে) যাতে ডিজিটাল কোর্ট, ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়। কারণ এভিডেন্স অ্যাক্টে এটা ছিল না। আইনটির ক্ষেত্রে ‘ইনফরমেশন’ বা ‘ডেটা’ - এই জিনিসগুলো এখন ব্যবহার করা হবে।
“আগে শুধু ‘ইনফরমেশন’কে ‘ইনক্লুড’ করা ছিল। এখন যে সব ‘ইনফরমেশন’ আসবে সেগুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া যাবে। কেবিনেট মিটিংয়ে এটা আলোচনা হয়েছে যে শুধু ইনফরমেশন না ডেটাকেও (সাক্ষ্য হিসেবে) নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ডকে কনসিডার করা হবে। এটা আগে ছিল না। আগে ছিল- কলা, হস্তরেখা এই জাতীয় জিনিসগুলো ছিল। কিন্তু ফরেনসিক এভিডেন্স অব ডিজিটাল রেকর্ড এটা ছিল না। শুধু ফরেনসিকটা ছিল। ডিজিটাল রেকর্ডকেও যুক্ত করা হয়েছে।”
খসড়া ‘বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
দেশের জাতীয় প্রতীক দিয়ে কোনো শিল্প নকশা করা হলে মিলবে না মালিকানা স্বত্ত্ব - এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২২ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “খসড়া আইনটি কিছুদিন আগে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।”
খসড়া আইন অনুযায়ী জাতীয় প্রতীকে গড়া কোন শিল্প-নকশার মালিকানা স্বত্ত্ব দেওয়া হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “শাপলা দিয়ে কেউ একটা নকশা করে বললো এটা আমার প্রোপারটি রাইট (স্বত্ত্ব), এটা (স্বত্ত্ব) দেওয়া হবে না। কেউ বাঘ দিয়ে, কাঁঠাল দিয়ে নকশা করলো, সেটার (মালিকানা দেওয়া) হবে না। কারণ এগুলো আমাদের জাতীয় নকশা।”
তিনি বলেন, “কোন শিল্প-নকশার স্বত্ত্বাধিকারী তার নিবন্ধিত শিল্প-নকশা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহার করা থেকে নিবৃত্ত করার অধিকার পাবেন। আমি যদি সঠিকভাবে কোন নকশার স্বত্ত্ব নিই, তবে কেউ সেটা ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে।”
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, “আইপিআর (মেধা সম্পত্তি অধিকার) কর্মসূচির আওতায় ডব্লিউআইপিও (ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অরগানাইজেশন) কর্তৃক এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য মেধাসম্পদ যাতে সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য একটা ‘মডেল ল’ করা দরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১১ সালের যে প্যাটেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন অ্যাক্ট ছিলো, যেটা অনেক পুরোনো, সেটাকে আধুনিক করে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কতিপয় শিল্প-নকশা এই আইনের অধীনে সুরক্ষা পাবে। আবার কিছু কিছু পাবে না। যেমন প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক দিক বিবেচনা করা হয়েছে। এই রকম কিছু ইনোভেশন যদি থাকে, যার বাণিজ্যিক ব্যবহার জনশৃঙ্খলা, পরিবেশ ও নৈতিকতার পরিপন্থি তাহলে সেটা সুরক্ষা পাবে না। সেটা দিয়ে কোন প্রটেকশন পাওয়া যাবে না। আমি এমন একটা জিনিস করলাম যেটা দিয়ে মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ হয়, আমি যদি দরখাস্ত দিই এটা আমার প্যাটেন্ট রাইট, এটা দেওয়া হবে না।
“অনিবন্ধিত কোন কিছুর নকশা থাকে, আমি এটার রেজিস্ট্রেশন করলাম না। শিল্প চালাচ্ছি, মুনাফা করছি। তখন অন্য কেউ যদি এটা করে, তখন সে দরখাস্ত দিতে পারবে না। তুমি তো রেজিস্ট্রেশনই করোনি।”
খসড়া আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি চাইলে তার শিল্প-নকশা বাতিল করার অধিকারও রাখেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।