আদালতে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ আসছে

মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ রেখে সাক্ষ্য আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2022, 08:32 AM
Updated : 14 March 2022, 09:16 AM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২২ এর খসড়ায় নীতিগত দেওয়া হয়। সচিবালয়ে এ বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকার প্রধান। 

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সাক্ষ্য আইনের ওই খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলা হয়।

“আপনারা জানেন, গত কোভিডের পর থেকে অনলাইনে মামলা মোকদ্দমা চলছিল, এর ফলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সব অনলাইনেই আসছিল। কিন্তু আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টে আবার এরকম ডিজিটাল এভিডেন্সের সরাসরি কোনো বিধান ছিল না। কেউ যদি মামলায় হেরে যেত, সে যদি আপিল করত উপরের কোর্টে, সেক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা হওয়ার সুযোগ ছিল।

“এটা অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল, সেজন্য তারা এটা নিয়ে এসেছেন। এখন থেকে ডিজিটাল যে এভিডেন্স, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।”

সচিব বলেন, কেউ যাতে ভুয়া বা জাল সাক্ষ্যপ্রমাণ ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করতে না পারে, আদালত যদি মনে করে যে কোথাও আপত্তিজনক কিছু আছে, অথবা কেউ যদি আপত্তি তোলে, তাহলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষা করা যাবে।

“এটা করলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে। কেউ একটা ম্যানুপুলেটেড এভিডেন্স দিলো, এটা কিন্তু বাঁচার কোনো উপায় নাই। কারণ ফরেনসিক করলেই ধরা পরে যাবে। বিশেষ করে ডকুমেন্টের ফরেনসিক কিন্তু দুই চার মিনিটেই করা যায়। 

“একটু সময় লাগে ভিডিওর ক্ষেত্রে, তাও খুব বেশি সময় লাগে না। আমাদের পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি আছে দেশে। … খুব হাই টেকনোলজি আছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরকার সুবিধামতো ছড়িয়ে দিয়ে… যে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে সেগুলো যদি কোর্ট বা কোনো পক্ষ মনে করে আপত্তি আছে, তাহলে ফরেনসিক করে নেবে।”

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “টুইস্ট করার কোনো উপায় নেই। কেউ যদি টুইস্ট করে, তাহলে আমাদের দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যের বিষয় আছে আর ডিজিটাল অ্যাক্টেরও ৫৭ ধারা আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

সোমবার ওই খসড়া নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটা খুব ট্রিকি জিনিস, এ জন্য কেবিনেট বলেছে, আবারও আমাদের কাছে নিয়ে আসুক, আমরা দেখে দেব।”

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, সংশোধনে সেখানেও পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ভিকটিমকে জেরা করার ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। কোন জাতীয় প্রশ্ন প্রয়োজন সেটা কোর্ট ঠিক করে দেবে।"

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।

আর ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এ রূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা দীর্ঘ দিন ধরে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই ঔপনিবেশিক আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।