ধর্ষণ: সাক্ষ্য আইন সংশোধনে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চায় হাই কোর্ট

ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ সাক্ষ্য আইনে রয়েছে তা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2021, 03:13 PM
Updated : 16 Nov 2021, 03:13 PM

সংশ্লিষ্ট রিট আবেদনটির শুনানি ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি রেখে এর মধ্যে পদক্ষেপ লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

আদলতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শারমিন আক্তার শিউলী ও মো. শাহীনুজ্জামান।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। 

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাই কোর্টে রিট করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট), আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ।

ধারা দুটিকে কেন বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যৌন স্বাধীনতা ও সমতার ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়। একমাত্র আইন সচিবকে বিবাদি করা হয়। 

মঙ্গলবার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাক্ষ্য আইন সংশোধন ও অধিকতর যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার ১৫৫ (৪) ধারাটি সংশোধন করা হবে।

এসময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম. ইনায়েতুর রহিম রিট আবেদনে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধরার পাশাপাশি ১৪৬(৩) চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেন।

তখন অ্যাটর্নি জেনারলে বলেন, সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আইনজীবীকে জেরা করার সুযোগ দেবেন কি দেবেন না, সেটা আদালতের বিষয়।

শুনানিতে রি আইনজীবী সারা হোসেন ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল বা সংশোধনের আশ্বাসে সন্দেহ প্রকাশ করে রুলের আরজি জানান।

তখন আদালত আইনের দুটি ধারা সংশোধন বা বাতিলের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে আবেদনকারী পক্ষের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে।

আইনজীবী শারমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল সাক্ষ্য আইনের একটি সংশোধনী খসড়া আদালতে জমা দিয়ে বলেছেন যে, ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪)ধারা বাতিল করে একটি সংশোধনী প্রস্তুত করা হয়েছে।

”তখন আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বললেন, যেহেতু এটা খসড়া পর্যায়ে আছে, সেহেতু আপনারা পিটিশনারদের সাথেও কথা বলতে পারেন। তাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়টা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে মতামত নিতে পারেন।

“পরে আদালত ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করে হলফনামা করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এর মধ্যে সাক্ষ্য আইনের সংশোধনী সংসদে পাশ হয়ে গেলে সেটা জমা দিতে বলেছেন। সংসদে পাশ না হলে কোন পর্যায়ে অছে তা হলফনামা করে দিতে বলেছেন।”     

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।

আর ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এ রূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা দীর্ঘ দিন ধরে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই ঔপনিবেশিক আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে এলেও স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরেও তা অক্ষত আছে।

এর মধ্যে ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণ মামলার রায়ে বিচারক ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক নারী।

এই পদযাত্রায় সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবি তোলা হয়। এই পদযাত্রার তিন দিনের মাথায় হাই কোর্টে রিট করা হয়।