“সাধারণত দিনে অন্তত এক লাখ মানুষ এই স্টেশনে আসা-যাওয়া করে, কিন্তু আজ তা অর্ধেক,” বলছেন স্টেশন ম্যানেজার।
Published : 31 Oct 2023, 06:12 PM
বিএনপি ও জামায়াতের তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকার কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন কমলাপুরে যাত্রী কম দেখা গেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্তে চলাচলকারী ট্রেন সময় মতো আসা-যাওয়া করছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পৌনে ১টার দিকে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে যতগুলো ট্রেন ছিল, সবগুলো ট্রেন চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ১৮টা ট্রেন গেছে, আসছে।
“ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। ট্রেনগুলো যথাসময়ে আসছে, ছেড়ে যাচ্ছে। আজ সারাদিনে ৫৩টি ট্রেন আসা-যাওয়া করবে। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা সবরকম নিরাপত্তা নিয়েছি।”
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যেতে যাত্রাবাড়ী থেকে দুপুর ১টার দিকে স্টেশনে আসেন আরিফ আহমেদ।
তিনি বললেন, “স্টেশনে আসছি রিকশায়। কারণ রাস্তায় বাস কম ছিল। আমি ব্যবসা করি, ভয় পাচ্ছিলাম অবরোধের কথা শুনে।
“কিন্তু দেখলাম যে ভিড় কম, টিকেটও পেয়েছি। ট্রেন টাইম মতোই আসবে বললো।”
ট্রেনের যাত্রী মিশকাত হাসান বলেন, “আমার বাসা ধানমণ্ডি, সিলেট যাব। টাইমের অনেক আগেই আমি স্টেশনে চলে আসছি, কারণ আমি ভাবছিলাম- রাস্তায় যদি কোনো ঝামেলায় পড়ি।
“কিন্তু তেমন কিছু হয় নাই। মানুষজনের উপস্থিতি স্বাভাবিক, ছুটির দিনের বিকালের মতো। তবে বাস কম রাস্তায়।”
বাস কম চললেও লোকজনের তেমন সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উবার-পাঠাও চলছে। আমি নিজেই পাঠাওয়ের বাইকে আসছি। তাছাড়া সব জায়গায় ভাড়ার বাইকও আছে।”
মিশকাতের কথার মিল পাওয়া গেল স্টেশন চত্বরের দিকে তাকাতেই। সারি সারি বাইকার বসে আছেন যাত্রীর অপেক্ষায়।
সেখানে কথা হলো বাইকার শিমুলের সঙ্গে। তিনি বললেন, “রাস্তায় বাস কম। তাই স্টেশনে যাত্রী কম থাকলেও অন্যান্য দিনের চেয়ে যাত্রী বেশি পাচ্ছি আজ। কারণ বাসে না যেতে পারলে তারা বাইকে-সিএনজিতেই যাবে।”
তবে যাত্রী উপস্থিতি কম হওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়ার কথা জানালেন স্টেশনের দোকানিরা।
বইয়ের দোকান গ্রন্থ বিতানের কর্ণধার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বললেন, “অন্যদিনের তুলনায় যাত্রী কম কিছুটা। তবে ট্রেন সব টাইমমতোই আসছে।
“এতে করে আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসা নাই।”
৩৬ বছর আগে পাবনা থেকে এসে কমলাপুর স্টেশনে বই বেচা শুরু করেন জামাল উদ্দিন।
তার ভাষ্য, “আজকে মানুষজন নাই। অন্যান্য দিন এখান দিয়া মানুষের জন্য চলাচল করা যাইতো না।
“আমি সকাল ৭টায় আসছি, এরপর থেকে এই অবস্থা চলতেছে। প্রতিদিন এই সময় এক-দেড় হাজার টাকার বিক্রি হয়ে যায় আমার। কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত এক-দেড়শো টাকা হইছে মাত্র।”
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, “সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে চললেও যাত্রী সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কম লক্ষ্য করছি আমরা। সাধারণত দিনে অন্তত এক লাখ মানুষ এই স্টেশনে আসা-যাওয়া করে, কিন্তু আজ তা অর্ধেক।
“আর অনেকে আগে ট্রেনের টিকেট কেটেছে। কিন্তু আজ আর তারা আসেনি।”