“যুদ্ধকালে ৩০ বছরের যুবক সাঈদী রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। উর্দু ভালো বলতে পারতেন বলে পাকিস্তানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।”
Published : 15 Aug 2023, 12:08 AM
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন, প্রসিকিউশন তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীর উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি আনোয়ারুল হক একথা বলেছিলেন।
যদিও জামায়াত দাবি করেছিল, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের নেতাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগের মধ্যে সোমবার সাঈদী মারা যাওয়ার পরও জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান শোকবার্তায় বলেন, “মিথ্যা ও যড়ন্ত্রমূলক মামলায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে তার উপর চরম অন্যায় করা হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলন থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর ফাঁসির দাবিই করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেই সাজা এলেও পরে আপিলের রায়ে শাস্তি কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসার পর এজলাসে আসন গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর এবং দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
সাঈদীকে সেদিন সকালেই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছিল। রায় ঘোষণার আগে আদালতের এজলাসে তাকে একটি চেয়ারে বিমর্ষ বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় খয়েরি রঙের হাতের কাজ করা টুপি ও ডানহাতে কালো চামড়ার বেল্টের ঘড়ি। এ সময় তাকে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছিল।
রায় পড়া শুরুর আগে বিচারপতি ফজলে কবীর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “এই মামলা যার বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিতি। তার ওয়াজ শুনতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে।
“দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কেবল মাওলানা হিসেবেই সুপরিচিত নন, তিনি দুইবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। তার আরেকটি পরিচয় হল, তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির।”
এভাবে আসামির পরিচয় দেয়ার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, “আজ এখানে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায় হচ্ছে না। দুই বারের সংসদ সদস্য বা জামায়াতের নেতা সাঈদীরও রায় দিচ্ছে না ট্রাইব্যুনাল।
“আজ যার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত দেলু নামে।”
বিচারপতি ফজলে কবীর বলেন, সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভালো বলতে পারতেন বলে পাকিস্তানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।
যে ২০টি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার হয়েছে তাতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও নির্যাতনের মতো ঘটনা রয়েছে বলে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল।
এরপর রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সফলভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাঈদী পিরোজপুরে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।”
রাজাকার, আলবদর, আল শামসের মতো এসব আধাসামরিক বাহিনীর সহায়তায় একাত্তরে দেশজুড়ে হত্যা-নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
ট্রাইব্যুনালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় আসার পর আপিল করেছিলেন সাঈদী। বছর দেড়েক পর ২০১৪ সালের শেষে আপিল বিভাগ সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
সেই দণ্ড ভোগ করার মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে সোমবার অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।