“পরবর্তীতে কী হবে, সেটা নির্ভর করছে যারা হাইজ্যাক করেছে, তারা কীভাবে কমিউনিকেট করে এবং কী কমিউনিকেট করে সেটার উপর ভিত্তি করে।”
Published : 15 Mar 2024, 12:38 AM
একবার দরকষাকষির মাধ্যমে এমভি জাহান মণি জাহাজকে ক্রুসহ উদ্ধার, অন্যবার জলদস্যুদের হাতে আটক সাত নাবিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমভি আবদুল্লাহ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে সরকার।
ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাইয়ের পর এমভি আবদুল্লাহকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার হোবায়ো বন্দরে পৌঁছেছে জলদস্যুরা। তবে মুক্তিপণের জন্য সরাসরি মালিকপক্ষ কিংবা সরকারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেনি তারা।
এমভি আবদুল্লাহ ও ক্রুদের উদ্ধারে করণীয় নির্ধারণে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
সভা শেষে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।
এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে ২০১১ সালে নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি এবং পরে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী আল-বেদো জাহাজের বাংলাদেশি নাবিকদের ফেরানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা বলেন খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে, কারণ জাহান মণি একটা জাহাজ, আপনারা জানেন, ২০১০ সালে পাইরেটসরা এই রকম ধরে নিয়ে গেছিল। ১০০ দিনের মাথায় আমরা জাহাজটাও ফেরত এনেছি। ১০০ দিন লেগেছিল।”
এরপর ২০১৪ সালের জুন মাসে জিম্মি হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজের সাত বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন নৌবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা।
২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর জাহাজটি জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। উপকূলে নিয়ে যাওয়ার পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই আলবেদো ডুবে যায়।
ওই জাহাজে সাতজন বাংলাদেশি, পাঁচজন শ্রীলঙ্কান, তিনজন ভারতীয় এবং দুজন করে পাকিস্তানি ও ইরানি নাবিক ছিলেন।
সে সময় সাত বাংলাদেশিকে উদ্ধারের সঙ্গে জড়িত খুরশেদ আলম বলেন, “এই আলবেদো জাহাজটাকেও তারা ধরে নিয়ে গেছিল। কিন্তু ধরে নেওয়ার পরে মালয়েশিয়ান মালিকপক্ষ বলল যে, এই জাহাজের কোনো দায়দায়িত্ব তারা নেবে না।
“তখন জাহাজটা ওখানে আটকা থাকে, আমরাই এখান থেকে কাজ করি। প্রায় আড়াই বছর পর জাহাজটি ডুবে গেল। ডুবে যাওয়ার সময় কিছু লোক মারাও যায়। তবে আমাদের কেউ মারা যায়নি। আমাদের লোকগুলোকে নিয়ে তারা সরিয়ে রেখেছিল। প্রায় তিন বছর ৪ মাস পরে আমরা নেগোসিয়েশন করে কেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে দিয়ে ওদেরকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত এনেছি।”
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।
জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান এবং নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিকপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
জিম্মি নাবিকদের ফেরাতে পরিবারের আকুতি এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়।
নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে এক প্রশ্নে খুরশেদ আলম বলেন, “ক্রুদের ওপর অত্যাচার অবিচার করলেতো ধরেন, ৩ বছর ৪ মাস আটকায়া রাখছিল, মেরেও ফেলতে পারত; এটাতো করেনি। টাকার আশায় তারা আটকায়া রাখছিল। কাজেই আমার মনে হয় না, ওইদিকটা আমাদের চিন্তা করার বা ওই দিকটা ভাবার কারণ আছে।
“ধরেন ৩০০-৪০০ জাহাজ সোমালিয়াতে পাইরেসি হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে গত সাল পর্যন্ত। বড় বড় উন্নত দেশের জাহাজও ছিল। সবাই যে পথ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এটাকে ছাড়িয়ে আনছে, আমরাও ক্রুদের অক্ষত রেখেই যাতে জানমালের কোনো ক্ষতি না হয়, সেই চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ।”
‘সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি’
জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে নোঙর করেছে বলে জানান খুরশেদ আলম; তবে, তাদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ না হওয়ার কথাই বলেন তিনি।
জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুরশেদ আলম বলেন, “এখনও তাদের সাথে আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি, তারাও আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।”
জাহাজ দখলকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না হলেও ভারতে দস্যুতার বিরুদ্ধে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা তুলে ধরেন তিনি।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুদ আলম এ বিষয়ে বলেন, “এখন যেহেতু সোমালিয়া উপকূলে জাহাজটি নোঙর করেছে। নিশ্চিতভাবে নোঙর করার পরবর্তীতে যারা এই জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, আমরা প্রত্যাশা করছি, কোনো না কোনো সময়ে তারা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা জাহাজের মালিকপক্ষের সাথে হয়ত যোগাযোগ করবে।
“তারপর, আমরা স্ট্র্যাটেজি সেট করব, কীভাবে তাদের সাথে নেগোসিয়েশন বা অন্যান্য করা যায়। আপাতত, আমরা চিন্তা করছি, জাহাজের যারা ক্রু আছে, তারা যেন নিরাপদ থাকে এবং জাহাজটি নিরাপদ থাকে।”
পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে এক প্রশ্নে নৌবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, “পরবর্তীতে কী হবে, সেটা নির্ভর করছে যারা হাইজ্যাক করেছে, তারা কীভাবে কমিউনিকেট করে এবং কী কমিউনিকেট করে সেটার উপর ভিত্তি করে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশেদ আলম বলেন, “সোমালিয়ান পাইরেসির ঘটনাটা আজকে থেকে না, ২০০১ সাল থেকেই হয়ে আসছে। বলা যায় গত ২৪ বছর ধরেই এখানে পাইরেসি হচ্ছে।
“আইনগত দিক থেকে উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে হলে এটাকে পাইরেসি বলা হয়। আমাদের এই জাহাজটাকেও কিন্তু তারা আটক করেছে বা বোর্ড করেছে উপকূল থেকে প্রায় ৫৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে দিয়ে যখন যাচ্ছিল।”
ওই এলাকা ভারত মহাসাগরের উচ্চ ঝুঁকির এলাকার মধ্যেও পড়ে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ভারত মহাসাগরে কতগুলি জায়গা ভাগ করা আছে, যে কোনটা হাই রিস্ক, কোনটা লো রিস্ক। আমাদের এ জাহাজটা কিন্তু হাই রিস্ক এরিয়ার ভেতর দিয়ে যায় নাই, বাইরেই ছিল।
“কিন্তু তারপরেও তারা হয়ত ওঁৎ পেতে ছিল, অনেক দিন হয়ত কোনো জাহাজ পায়নি, জাহাজে বোর্ড করেছে তারা। মতান্তরে অনেক ভিন্নমত আছে। তারা ৬০-৭০ জন লোক হয়ত হবে। আমাদের ২৩ জন ক্রু আছে।”
উদ্ধারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “জাহাজের যারা কর্তৃপক্ষ-মালিক, তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি। মোটামুটি সকল পক্ষের সাথেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আমাদের আছে। তো, আমরা এখনও জানি না, তাদের কী দাবিদাওয়া।
“যদি আমরা জানতে পারি, তখন হয়ত কৌশলগত কারণেই আমরা আপনাদেরকে পুরোপুরি জানাতে পারব না।”
ধৈর্য ধরার পরামর্শ
জলদস্যুদের সঙ্গে দর কষাকষির স্বার্থে গণমাধ্যমকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, “আশা করি, আপনারা একটু ধৈর্য ধরবেন এই কারণে যে, পত্রপত্রিকায় বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে যে সমস্ত খবর আপনারা দিচ্ছেন, গত দুই তিন দিন ধরে, আমি এটাতে অন্যায় কিছু দেখি না।
“অন্য একটা দিক আছে, যে জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, যত খবর আপনারা মিডিয়াতে দেবেন, এটা কিন্তু তারা ওখানে দেখবে।”
খুরশেদ আলম বলেন, “আমি আশা করব, আপনারা খবরটা দেন, কিন্তু এইরকমভাবে দেবেন না, যেটাতে আমাদের সরকার এবং যারা এটা নিয়ে নেগোসিয়েশন করবে, তারা একটু বেকায়দায় পড়ে যায়।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য জাহাজের ২৩ জন নাবিক এবং জাহাজ মালামালসহ ফেরত আনা, সেই লক্ষ্য থেকে আমরা সহজে বিচ্যুত হব না এবং আমি আশ্বস্ত করতে পারি আপনাদের, আমরা হয়তবা তাড়াতাড়ি একটা শুভ সংবাদ দিতে পারব। কিন্তু সেটা কবে?
“আপনি দেখেন, জাহান মণিতে ১০০ দিন লাগছে, আর সাতজন ক্রুর জন্য লাগছে ৩ বছর ৪ মাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার। খুব একটা সেনসেশনাল নিউজ যে হবে, এটা আশা করা কিন্তু ঠিক হবে না।”
কাদের মাধ্যমে মধ্যস্থতার আলোচনা চলছে প্রশ্ন করলে খুরশেদ আলম বলেন, “প্রকাশ্যে বললেতো আর নেগোসিয়েশন থাকবে না।”
বীমা কোম্পানির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টায় মালিকপক্ষ
চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এস আর শিপিং লাইনের একটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ওই জাহাজের ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। তারা এখন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছায়। রাত পৌনে ৮টার দিকে জাহাজের অবস্থান ছিল উপকূল থেকে সাত মাইল দূরে।
কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে জাহাজটি উদ্ধারে যোগাযোগ স্থাপনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি এখন সরকারিভাবেও দেখা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় জাহাজটি উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।”
মঙ্গলবার একজন নাবিকের পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মুক্তিপণের অর্থের একটি পরিমাণও বলেছে তাদের সংবাদমাধ্যমে।
তবে মিজানুল ইসলাম বলেছেন, জলদস্যুদের সঙ্গে তাদের এখনও সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। ফলে মুক্তিপণের যে অংক বলা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।
কবির গ্রুপের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাজের বীমাকারী বিদেশি কোম্পানি তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
“আগেরবার আমাদের যে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়েছিল, সেটিও যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। এটা নিয়ে দর কষাকষি করতে হয়। সাধারণত তারা (জলদস্যুরা) কোন জাহাজ ছিনতাই করলে কিছুদিন ঘোরায়। এরপর তারা যোগাযোগ করে।”
এক দশক আগে জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি জাহান মনি’ জাহাজটির মালিকও কবির গ্রুপ। নানাভাবে দর কষাকষি করে তিন মাস পর সেই জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের দেশে ফেরানো হয়েছিল সে সময়।
তখন মুক্তিপণের বিষয়টি প্রকাশ্যে উল্লেখ করা না হলেও লেনদেনের ভিত্তিতেই নাবিক ও জাহাজটি মুক্ত হয়েছিল। সেসময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তখন জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছিল দস্যুদের কবল থেকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে উদ্ধারের জন্য ‘সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে’ সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
সেই সেকেন্ড পার্টি কারা, তা স্পষ্ট না করলেও তিনি বলেছেন, “ইতোমধ্যে রিপোর্টিং সেন্টার ইন কুয়ালালামপুর, ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার ইন নিউ দিল্লি, তারপর সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, চায়নাসহ সকল এরিয়াল নেভাল শিপে জানানো হয়েছে। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
কেমন আছেন নাবিকরা?
জলদস্যুরা ছিনতাই করা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ে সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর জিম্মি নাবিকদের একজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ‘আকুতি’ জানিয়েছেন।
আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে তার ছোটভাই আসিফ খানকে অডিও বার্তা পাঠিয়ে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান।
অডিও বার্তায় আতিক বলেন, “কেমন আছো তোমরা? আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, সুস্থ আছি... কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা সবাই এখন ব্রিজে ঘুমাই, এরকমতো আমাদের অভ্যাস নেই, তারপরও ঘুমাচ্ছি, একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই।”
তিনি বলেন, তাদের উদ্ধারের জন্য দুটো সামরিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি।
“গতকাল একটা নেভি জাহাজ আসছিল, আজকেও একটা এসেছে। টোটাল দুইটা এসে আমাদের রেসকিউ করতে চাইছিল। বাট পসিবল না, কারণ ওরা তখন আমাদের মাথায় গান ধরে জিম্মি করে রাখে। নেভি জাহাজ ফ্রিগেট আসলে তারা আমদের জিম্মি করে।”
গত দুই দিনে সোমালি দস্যুদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো হয়েছে’ বলেও জানান আবদুল্লাহর চিফ অফিসার।
তিনি বলেন, “আজকে আমরা সোমালিয়া আসলাম, আসার পরে ওদের সাথে আমাদের ভালো রিলেশন হইছে। বলে কয়ে আমরা একটু কেবিনে আসলাম। বাট আবার পরে ব্রিজে চলে যেতে হবে। কথা হচ্ছে আল্লাহ যতদিন মানসিকভাবে আমাদের শক্ত রাখে!
“তোমরাও ভালো থাকিও, সবাইকে দোয়া করতে বলিও যেন আমরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারি। রোজার উসিলায় আমরা ব্রিজে বসে আল্লাহ আল্লাহ করি। আশা করি আল্লাহ আমাদের ডাক শুনবেন।”
পাঠানো বার্তায় ঈদের আগেই দেশে ফেরার আকুতি ছিল চিফ অফিসার আতিকের কথায়।
তিনি বলেন, “সরকারও যেহেতু পদক্ষেপ নিচ্ছে, কোম্পানিও যেহেতু সজাগ আছে এবং বিশ্ব মিডিয়াও আমাদের নিয়ে কথা বলছে ইনশাল্লাহ শিগগিরই আমরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব। ঈদের আগেই যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি এটাই আমরা চাই আরকি।”
অপারেশন আটলান্টা
হর্ন অব আফ্রিকা ও পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় উপকূলে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা ঠেকাতে এক দশকের বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইইউএনএভিএফওআর, যাদের কার্যক্রম অপারেশন আটলান্টা হিসেবে পরিচিত। এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে তারাও সক্রিয় হওয়ার কথা জানিয়েছে।
ইউরোপীয় এই নৌ নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে তারা সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে।
❗️Information on the piracy event involving the Bangladesh-flagged Bulk carrier merchant vessel ABDULLAH.
Operation ATALANTA will update on the evolution of events as more information is confirmed.
More information ⤵️ pic.twitter.com/WRoLAAdux9
— EUNAVFOR ATALANTA (@EUNAVFOR) March 13, 2024
এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার পাশাপাশি ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য অপারেশন আটলান্টার পক্ষ থেকে সোমালিয়া ও বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় নৌবাহিনীসহ সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সেই কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা স্পষ্ট করা না হলেও মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স এ আরেক পোস্টে ইইউএনএভিএফওআর তাদের যুদ্ধজাহাজ এবং সামরিক বিমান ‘অপারেশনের এলাকায়’ সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
#OperationAtalanta 's warships and air assets move in the Area of Operations to provide maritime security, stopping at different ports in the region.
???? Frigate ESPS #CANARIAS in the port of Djibouti.@eu_eeas @Armada_esp @EMADmde#MaritimeSecurityProvider pic.twitter.com/FXwTbOmXI0
— EUNAVFOR ATALANTA (@EUNAVFOR) March 12, 2024
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে কবির গ্রুপের কর্মকর্তা মিজানুল ইসলাম বলেন, ইইউএনএভিএফওআর এর একটি জাহাজ যে এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছেন, সেটি তারাও জানেন। তবে বুধবার রাতে জাহাজ ঘিরে গোলাগুলির যে কথা শোনা গেছে, সে বিষয়ে তার কাছে কোনো খবর নেই।