ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই মেলায় আসেন অনেকেই।
Published : 21 Feb 2023, 09:12 PM
ভোরের প্রভাত ফেরির ঢেউ সকালে এসে মিশে গেল অমর একুশে বইমেলায়, দুপুরে সমাগম কিছুটা কম হলেও বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলা রূপ নিল জনসমুদ্রে।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার মেলা চলে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এ দিন নতুন বই এসেছে ৩০৩টি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপর অনেকেই এ দিন আসেন বইমেলায়। প্রিয়জনকে বই উপহার দিতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। সারাদিনই ব্যস্ততায় কেটেছে বিক্রয়কর্মীদের।
বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মেলার প্রথম দিন থেকেই বাতিঘর স্টলে বিক্রি ভালো হচ্ছে। ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনও প্রত্যাশিত বিক্রি হয়েছে।"
বড় প্রকাশনীর স্টলে ভালো বিক্রি হলেও ছোট প্রকাশনগুলো বলছে, লোক সমাগম অনুযায়ী বিক্রি সন্তোষজনক নয়। গ্রন্থ প্রকাশের এক বিক্রয়কর্মী বললেন, “লোকজন অনেক আসছে মেলায়, কিন্তু বই কিনছে না সবাই। বেশিরভাগই মেলায় ঘুরতে এসেছেন। ফলে লোক সমাগম বেশি দেখা গেলেও ক্রেতা কম।"
আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, "মেলায় বই বিক্রি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। অনেক প্রকাশনীর স্টল আছে, কিন্তু তাদের স্টলে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই নেই। তবে তাদের বিক্রি তো কম হবেই। যদি ভালো পণ্য না থাকে, বিক্রি আশা করাটা তো ঠিক হবে না।"
সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ বলেন, "এবার ৫০টির বেশি বই আমরা প্রকাশ করেছি। আমরা মনে করছি, আমাদের সব বই মানসম্পন্ন। আমাদের স্টলে বিক্রিও ভালো হচ্ছে।"
এ দিন সকালে মেলায় শিশুকিশোরদের অংশগ্রহণ বেশি থাকলেও বিকালের পর বিভিন্ন বয়সের বইপ্রেমীদের আগমনে মেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। তবে অতিরিক্ত লোক সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ফটকের দায়িত্বরতদের।
আজিমপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বইমেলায় এসেছেন ব্যাংকার মোশতাক আহমেদ। তিনি মেয়েকে কিনে দিয়েছেন মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একাধিক বই।
মোশতাক আহমেদ বলেন, “চাকরির জন্য তো আসতে পারি না। কিন্তু মেয়ের আবদার বইমেলায় যাবে। এজন্যই মেলায় এসেছি এবং মেয়ে তার পছন্দমতো বই কিনেছে।"
নানা অনুষ্ঠান
এ দিন সকাল ৮টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে প্রায় ১৫০ জন কবি কবিতা পাঠ করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি জাহিদুল হক।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩।
এ আয়োজনের বক্তা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বিদেশ সফরে থাকায় লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন ত্রপা মজুমদার।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, "আমরা সবাই স্বীকার করি, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয়তাবোধ শাণিত হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কেবল আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন ছিল না। এর সাথে জড়িয়ে ছিল আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশের আন্দোলন।
“আজ স্বাধীন দেশের ভাষার অধিকার বলতে আমরা বুঝি সব মানুষের সার্বিক বিকাশের অধিকার। তাই সর্বস্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সব মানুষের জীবন বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, "আমাদের জীবনে ২১শে ফেব্রুয়ারি সাধারণ কোনো দিন নয়; জাতির জীবনে এ দিবসটির মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একুশ আমাদের চেতনাকে জাগ্রত রাখে। একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের তরুণ সমাজকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে।"
এ দিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসউদ আহমাদ, তানভীর সালেহীন ইমন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও শামীম আজাদ।
সন্ধ্যায় মূলমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়ুয়া, নভেরা হোসেন, রিমঝিম আহমেদ, মতিন রায়হান, নাজমুল হেলাল, সালমা বেগ, ইমরুল ইউসুফ, ইসমত শিল্পী, মায়াবী কাজল, গিয়াসউদ্দিন চাষা।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন একুশে পদকজয়ী আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, আহ্কামউল্লাহ। এছাড়া ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শিবু রায়, কল্যাণী ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, আবদুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মণ্ডল ও সোমা দাস।
যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), মো. মোস্তাফিজুর রহমান ডাবলু (কি-বোর্ড), আনসার আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
বুধবার যা থাকছে
বুধবার ২২তম দিনে মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মতিন রায়হান ও সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেবেন তারিক সুজাত, তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন ও অনুপম হীরা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কামাল চৌধুরী।