গাজীপুরে ভোট নিয়ে অশঙ্ক ইসি

দুদিন বাদেই ভোট এই সিটি করপোরেশনে; আশঙ্কিত স্বতন্ত্র দুই মেয়র প্রার্থী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 03:01 PM
Updated : 23 May 2023, 03:01 PM

বিএনপি না এলেও নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর অংশগ্রহণে অনেকটা জমজমাটভাবেই শেষ হল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার।

বৃহস্পতিবার ভোটের আগে মঙ্গলবার শেষ দিনের প্রচারে প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান, জায়েদা খাতুন ও রনি সরকার ছোটেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত ভোটকেন্দ্রে ‘আশানুরূপ’ ভোটারের আশা করলেও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী জায়েদা ও রনি ভোটারদের নিরাপত্তা এবং কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তবে নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা নিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, রাজধানী লাগোয়া এই নগরীতে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছেন তারা।

শিল্প এলাকা গাজীপুরে নানা ধরনের মানুষের বসবাসের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার কথা মাথায় রেখে এবার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকছে।

মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গাজীপুর সিটির ভোটের সবশেষ প্রস্তুতি নিয়ে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, “প্রার্থীদের নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো ধরনের শঙ্কা করা হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করা হলেই ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।”

Also Read: গাজীপুর সিটি ভোট: ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আশাবাদী নৌকার আজমত

Also Read: গাজীপুরে ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা হচ্ছে, শঙ্কা রনির

Also Read: গাজীপুর সিটি ভোট: ভোটারদের ‘নিরাপত্তা’ চান জাহাঙ্গীরের মা

স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর শঙ্কা প্রকাশ নিয়ে আলমগীর বলেন, “নির্বাচনে সবাই জিততে চায়, সেভাবে তারা প্রচারণা চালান ও বক্তব্য দেন। কিন্তু ইসির কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা করা।”

“আমাদের যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো আমরা কমপ্লিট করেছি। ইভিএম প্রস্তুত, বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর সিটি ভোট দেখভালের দায়িত্বে থাকা এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “প্রিজাইডিং অফিসার ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্যরা একসঙ্গে কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে কোনো খাবার খাবেন না, নিজেরাই নিজেদের খাবার জোগাড় করে নেবেন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ব্যাটালিয়ান আনসার চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ভোটের তদারকিতে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম থাকবেন।”

আলমগীর বলেন, “গাজীপুর শিল্প এলাকা হওয়ায় অন্যান্য এলাকার লোকজনও রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের বসবাস রয়েছে, কিছু মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও বেশি। তবে নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী জানিয়েছে-কোনো থ্রেট (হুমকি) নেই।

“থ্রেট না থাকলেও প্রিভেন্টিভ মেজার (প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা) হিসেবে যেহেতু শিল্প এলাকা তাই দুষ্কৃতিকারীরা বা অসৎ উদ্দেশ্য যাদের থাকে, তারা যেন অন্যায় পরিস্থিতি করতে না পারে, তাই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

এ সিটি নির্বাচনে ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, “সবগুলো কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি), আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

তিনি জানান, ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবির থাকবে ১৩টা প্লাটুন, ২০জন বেশি থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।

“অর্থাৎ প্রচুর আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না হয়। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, সে যে দলের বা যেই হোক না কেন তাকে সাথে সাথে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।”

২০১৮ সালে ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছিল ইসি।

নির্বাচনে অনিয়মে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে, অনিয়মের মাত্রার ওপর তা নির্ভর করবে বলেও জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

প্রতিটি কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদে লড়ছেন - মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ।

স্বতন্ত্র মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম লড়ছেন।