গাজীপুর সিটি ভোট: ভোটারদের ‘নিরাপত্তা’ চান জাহাঙ্গীরের মা

মেয়র পদের জন্য ভোটের রাজনীতিতে পা রাখা ৭০ বছর বয়সী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারের দেখভাল করছেন তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 02:28 PM
Updated : 23 May 2023, 02:28 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ভোটার ও এজেন্টদের নিরাপত্তা চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিন মঙ্গলবার তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা চাই। আমার (টেবিল) ঘড়ি মার্কায় ভোট চাই, ভোটের নিরাপত্তা চাই।”

ঢাকার লাগোয়া এ সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে বৃহস্পতিবার ভোট দেবেন পৌনে ১২ লাখের বেশি ভোটার। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪৮০টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

জায়েদার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে এ সিটির দ্বিতীয় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য দলীয় পদের সঙ্গে মেয়র পদও হারান।

ভোটের আগে আগে দল তাকে ক্ষমা করলেও মনোনয়ন দেয়নি। দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রার্থী হতে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ থেকে তিনি বহিষ্কার হয়েছেন। 

ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে গেছে। তবে মাকে প্রার্থী করার যে কৌশল তিনি নিয়েছিলেন, সেটা টিকে গেছে।

সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ পদের জন্য ভোটের রাজনীতিতে পা রাখা ৭০ বছর বয়সী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচার দেখভাল করছেন তার ছেলে জাহাঙ্গীরই।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর ছয়দানা এলাকার বাসায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জায়েদা। তবে, মায়ের পক্ষে জাহাঙ্গীরই ইশতেহার ঘোষণা করেন এবং নির্বাচনের বিষয়ে মায়ের অবস্থান তুলে ধরেন।

সবশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নির্বাচন নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন জায়েদা, সে সময় তিনি ‘ভোটের নিরাপত্তা’ চান সরকারের কাছে।

জায়েদাকে পাশে রেখে জাহাঙ্গীর বলেন, “আমার মা বলেছেন- ‘আমার সন্তান এবং আমার জন্মভূমি গাজীপুরের ‍উপর বিগত ১৮ মাস যাবত অত্যাচার করা হয়েছে।’ এবং এর প্রতিবাদে আমার মা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং আগামী ২৫ তারিখের জন্য সকল কর্মসূচি তৈরি করেছেন।”

টেবিল ঘড়ির মার্কার সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “৫৭ ওয়ার্ডের ৪৮৫ কেন্দ্রে, সকল জায়গায় যারা টেবিল ঘড়ি মার্কায় নির্বাচন করছেন, প্রচার করছেন এবং এজেন্ট থাকবেন, প্রত্যেকের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নির্বাচন না করার  জন্য এবং টেবিল ঘড়িকে সাপোর্ট না দেওয়ার জন্য বলে দিচ্ছে।

“অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে, তারা সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোটটা করার জন্য সহযোগিতা করবে। কিন্তু সেটা না করে, আমাদের যারা সাপোর্ট করে, মাকে সাপোর্ট করে তাদেরকে রাতে-দিনে প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে।”

অনেককে গাজীপুর থেকে ‘ধরে’ সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে মাদক ও অন্যান্য অভিযোগে ‘মামলা দেওয়া হচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “দয়া করে আমাদের সদস্যদের ছেড়ে দেন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করুন। না হয়, নির্বাচনের নামে একটা তামাশা হবে। আমরা তামাশা চাই না, আমরা নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।”

জায়েদাকে উদ্ধৃত করে জাহাঙ্গীর বলেন, “উনি বলেছেন, ‘আমি যে জায়গায় যাই, আমাদের লোকদের উপর হামলা করে, আমাদের লোকদের এই শহর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেকে বাড়িতে থাকার কোনো অধিকার নাই, প্রশাসনের লোক গিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। এটা ভোটের পরিবেশ হতে পারে না।’

“যেহেতু সংগ্রামী জীবন, আমার মা বলেছেন, ‘সর্বশেষ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে রক্ষার জন্য, এই এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে চাই। ২৫ তারিখ সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন।’ অনুরোধ করেছেন মা, যেন সকালে এসে সকালে ভোটটা দেয়।”

গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এক মাকে পরাজিত করার জন্য অন্যান্য মাদের যে কাঁদিয়েছেন, এটা ভালো না। হুমকি দিচ্ছেন, সেটা থেকে সরে আসেন। ভোটটা গাজীপুরের মানুষ সুন্দরভাবে করবে।”