“দিন যত ঘনাচ্ছে, দিন যত পার হচ্ছে, পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হচ্ছে।”
Published : 23 May 2023, 08:02 PM
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম (রনি সরকার)।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিন মঙ্গলবার গণসংযোগে গিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন দিন আগেও যে পরিস্থিতি ছিল, এখন কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতো নাই। নৌকার প্রার্থীরা যে কেন্দ্র দখল করবে, তারই একটা পাঁয়তারা মনে হয় চলছে গত তিন দিন যাবত।
“আগে নির্বাচনের পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল বলতে পারি, দিন যত ঘনাচ্ছে, দিন যত পার হচ্ছে, পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হচ্ছে।”
বিএনপির বর্জনের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গাজীপুরের প্রভাবশালী বিএনপি পরিবারের সন্তান রনি সরকার। তার চাচা হাসানউদ্দিন সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকার লাগোয়া এই মহানগরীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন।
রনি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্যে জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যার মামলায় নুরুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তবে কারান্তরীণ এই নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায় এখনও কার্যকর হয়নি।
নুরুল ইসলাম সরকারকে হারিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রথমবার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এবারের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান।
সর্বশেষ কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালে নির্বাচন করেও তিনি আজমত উল্লা খানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। বাবার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় পরিসরের নির্বাচন সিটি করপোরেশনে হারানোর আশা করছেন রনি সরকার।
আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিন মঙ্গলবার সকালে রনি সরকার টঙ্গী বাজার এলাকায় নিজ বাসায় নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেন। এরপর টঙ্গী পশ্চিম থানার কাঁঠালদিয়ায় গণসংযোগে বের হন তিনি।
গণসংযোগের সময় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সানরুফ খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিলেন হাতি মার্কার প্রার্থী রনি। আরও দুটি কার ছিল তার সঙ্গে। সামনে-পেছনে কয়েকজন নেতাকর্মী ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন। কয়েক জায়গায় নেমে প্রার্থী নিজেও লিফলেট বিতরণ করেন।
শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার অভিযোগ করতে গিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার কলাবাগান বস্তিতে গিয়ে গণসংযোগে বাধা পাওয়ার কথা তুলে ধরেন রনি সরকার।
তিনি বলেন, “কলাবাগান বস্তিতে গাড়ি তো ঢুকতে দেয়ই নাই, আমরা পায়ে হেঁটে যখন ঢুকতে যাচ্ছিলাম, তখনও তাদের বাধার মুখে পড়ে ব্যাক করতে হয়েছে। বলছে, আপনি যদি এক পাও আগান, পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যাবে। আপনি এখন, এই মুহূর্তে চলে যান।”
এজেন্ট দিতে বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ করে হাতি মার্কার প্রার্থী বলেন, “আমাদের এজেন্ট দেওয়ার ব্যাপারে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এজেন্টরা ভয় পাচ্ছে। এবং আমরা নিজেরাই তো এখন শঙ্কিত, নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে, সেই ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি সন্দেহ প্রকাশ করছি।”
৫৭ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রের জন্য এজেন্ট ঠিক করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত কাগজপত্রও রেডি আছে। আমরা প্রত্যেকটি কেন্দ্রে এজেন্ট মোটামুটি সুন্দরভাবে দিতে পারছি। কিন্তু একজনকে যদি এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে যেহেতু নির্বাচন একটি দলীয় সরকারের অধীনে হচ্ছে, মানুষ ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক।”
তারপরও নির্বাচনে নিজের জয়ের আশাবাদী হওয়ার কথা জানিয়ে রনি সরকার বলেন, “যেহেতু সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা একদম শূন্যের কোটায়, এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, আওয়ামী লীগবিরোধী যে ভোটটা আছে, সেটা আমরাই হাতি মার্কায় পাব।”
বিএনপির বর্জনের মধ্যে দলের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “দলের তৃণমূলের যারা আছে, দলের সমর্থক যারা আছে, তাদের সকলের সমর্থন আমরা ব্যাপকভাবে পাচ্ছি। কিন্তু এখন আপনারা জানেন, বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ফলে মানুষের মধ্যে ভয়ের জায়গা, একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
“সেজন্য আমরা বারবার বলছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে এজেন্ট দেওয়া চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেক্ষেত্রে যদি মানুষ ভয় পায়, সেটায় আমাদের জন্য বেশ কষ্ট হচ্ছে।”
গাছা থানা বাদে সিটি করপোরেশনের প্রায় সব জায়গায় গণসংযোগ শেষ করতে পেরেছেন বলেও জানান রনি সরকার।
ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা ইভিএমে যেটা সন্দেহ প্রকাশ করছি, যদি আমাদের এজেন্ট না থাকতে দেয়, শুধু আওয়ামী লীগের এজেন্ট থাকে …
“আর ইভিএমটা গাজীপুরে একদম নতুন, সাধারণ মানুষ, গাজীপুরের মানুষ সহজসরল মানুষ, তাদেরকে যদি দেখিয়ে দেয়, নির্দিষ্ট বাটনে প্রেস করতে, যারা নিরীহ মানুষ আছে, যারা মুরব্বীরা আছে, তারা হয়ত ওইটার দিকে বেশি খেয়াল করবে। সে কারণে এটার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করছি।”