হাশেম নামের ওই ব্যক্তি ‘দরবেশ’ পরিচয়ে প্রতিমাসে ফেসবুক ও গুগলে চার লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিতেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
Published : 27 Jan 2024, 04:15 PM
সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডি।
সংস্থাটি বলছে, ‘দরবেশ বাবার পরিচয়ে’ ‘সব মুশকিল আসানে’র বিজ্ঞাপন দেখে আনোয়ারা বেগম নামে ৫৯ বছর বয়সী সাবেক ওই সরকারি কর্মকর্তা ওই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেন।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে কয়েক দফায় তার কাছ থেকে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
গ্রেপ্তার দুইজন হলেন ভোলার বোরহানউদ্দীনের মো. হাশেম ও তার সহযোগী তানজিল আহমেদ ওরফে তানজিদ হাসান।
হাশেম নামের ওই ব্যক্তি ‘দরবেশ’ পরিচয়ে প্রতিমাসে ফেসবুক ও গুগলে চার লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিতেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানালেও আনোয়ারা সরকারের কোন সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন, সেটি বলা হয়নি। এটা জানানো হয়েছে, তার স্বামী একজন নামকরা চিকিৎসক। তার তিন ছেলে মেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত, তারা দেশের বাইরে থাকেন।
কীভাবে প্রতারণা
আনোয়ারা বেগম কিছুটা পারিবারিক সমস্যায় ছিলেন জানিয়ে এতে বলা হয়, তিনি এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন। একদিন ফেইসবুক স্ক্রল করার সময় ‘সুন্দর সৌম্য চেহারার দরবেশ বেশধারী’ ব্যক্তির ভিডিও সামনে আসে।
তিনি নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে কোরআন হাদিসের আলোকে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করার কথা জানান। দাবি করেন স্বামী-স্ত্রীর অমিল, বিয়ে না হওয়া, বাচ্চা না হওয়া, লটারি জেতানোসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন।
বিজ্ঞাপনে দুই জন মেয়ের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়। মেয়ে দুটিকে দাবি করেন, তারা এই ‘দরবেশ বাবার’ কাছ থেকে সমস্যার সমাধান পেয়েছেন।
আনোয়ারা তার বাসার গৃহকর্মীর পরামর্শে বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করেন। সেই ব্যক্তি তার সঙ্গে বেশ আন্তরিকভাবে কথা বলেন। সেই সঙ্গে তার উপর আস্থা রাখার কথা উল্লেখ করে ‘কিছু খরচ লাগবে’ বলে জানান।
এই ‘খরচের কথা’ কাউকে জানালে সমস্যা সমাধান হবে না বরং ছেলে-মেয়ে ও স্বামীর ক্ষতি হবে বলেও সতর্ক করা হয়।
পরে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে নিয়মিত টাকা পাঠাতে থাকেন আনোয়ারা। অন্য মাধ্যমেও নেওয়া হয় তা। কখনও কখনও একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকাও দিতেন আনোয়ারা।
এভাবে ধীরে ধীরে সাত কোটি টাকা দেওয়ার পর প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। পাশাপাশি অভিযোগ করেন সিআইডিতে।
প্রতারণার জাল দেশে দেশে
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি দল প্রথমে ঢাকার উত্তরা থেকে অভিযুক্ত তানজিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জানান, চক্রের প্রধান হাশেম থাকেন ভোলার বোরহানউদ্দীনে। শনিবার রাতে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
হাসেম সিআইডিকে জানান, তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই কাজ করছেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতেন। ২০১৬ সাল থেকে ইউটিউব ও ফেসবুকেও বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন।
মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপের ইতালি ও ফ্রান্সেও বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রলোভন ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা নিতেন।
হাসেম হিন্দি ও আরবি ভাষাতেও দক্ষ। বিভিন্ন রকম কণ্ঠে কথা বলতে পারেন।
এভাবে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে এক ফ্রান্স প্রবাসীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। সিআইডি জানতে পারে, ফ্রান্স প্রবাসী ইমাম হোসেন এভাবে টাকা খরচ করলেও তার স্ত্রী-সন্তানরা দেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছেন।
লটারি ও জুয়ায় জেতার আশায় এক ইতালি প্রবাসী কথিত সেই দরবেশকে দিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)