ডেঙ্গুর প্রকোপ এক সপ্তাহে কিছুটা কমেছে

এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি কমেছে ১০ শতাংশ, মৃত্যু কমেছে ১৮ শতাংশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 01:35 PM
Updated : 10 Nov 2022, 01:35 PM

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই কিছুটা কমেছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কমেছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মৃত্যু কমেছে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, গত শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজার ৫০৩ জন রোগী। এই সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।

আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬ হাজার ১৬১ জন রোগী। ওই সপ্তাহে ৩৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রোগী কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টিপাত কমার পাশাপাশি শীত বাড়ছে, এ কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ তেমন বাড়বে না। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এই ধারায় কমতে থাকবে। কারণ এখন বৃষ্টি হচ্ছে না।”

“বৃষ্টিপাত কমে গেলে এডিস মশার ঘনত্ব কমে আসে। এছাড়া শীত পড়লে এইডিস মশার প্রজননক্ষমতা কিছুটা কমে আসে। তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা এক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রাখে,” বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৮৮৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

চলতি সপ্তাহে ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৫১৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। আগের সপ্তাহে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৫৩ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ২ হাজার ৬০৮ জন। রোগী ভর্তি হয়েছিল।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ২৪৮ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ৯১৫ জন। অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ৩৩৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সংবাদ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত একদিনে ভর্তি রোগীদের ৪৭৫ জন ঢাকায় এবং ৪১৩ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ১৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে।

এছাড়া ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৭৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪ জন, খুলনা বিভাগে ৫৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৩ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

দেশে এ পর্যন্ত যে ১৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১১৬ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায় একজন, মানিকগঞ্জ জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় এই মশার দংশনে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। তবে এ বছর এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।

এ বছর অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৯৩২ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিল মাসে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৫৭১ জন, অগাস্ট মাসে ৩ হাজার ৫২১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সর্বোচ্চ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অক্টোবর মাসেই। এ ছাড়া জুন মাসে ১ জন, জুলাই মাসে ৯ জন, অগাস্ট মাসে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।

নতুন ভর্তি রোগীদের নিয়ে দেশে এ বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৪৮৬ জন হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৯২ জনের।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা এ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এবারই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য।

২০১৯ সালে এক লাখ ১ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় ১৬৪ জনের।