‘যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘ইউএসএতে বাংলাদেশি নিহত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন?’–প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড দেখানো হয় মানববন্ধনে।
Published : 09 Jan 2023, 01:15 PM
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদশি বংশোদ্ভূত তরুণ সৈয়দ আরিফ ফয়সালের মৃত্যুর বিচার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে ঢাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পষিদের এক কর্মকর্তার আগমন ঘিরে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।
চার দিনের সফরে শনিবার বাংলাদেশে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ইলিন লোবেশার। সোমবার দুপুরে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার কথা রয়েছে।
গত বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের শিক্ষার্থী ফয়সাল।
নিজেদের কমিউনিটির সন্তান ফয়সালের এই মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে সেখানে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশে তার পরিবারও বিচারের দাবি জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধনে শ খানেক মানুষ অংশ নেন। ‘যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘ইউএসএতে বাংলাদেশি নিহত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন?’, ‘স্টপ কন্টিনিউয়াস হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
মানববন্ধনে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “যেসব দেশে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে আমরা সেসব জায়গায় প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন চাই না।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলে। আমরা বলব নিজ দেশে কী ঘটছে, তার উপর নজর দিন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর বলছে, সেখানে এক বছরে পুলিশের এক হাজার লোককে হত্যা করেছে।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলব, এই যে এক হাজার লোককে হত্যা করার ঘটনা, তাতে চোখ বন্ধ করে থাকবেন না।”
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বলেন, “এ দেশে আপনারা যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না। অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানোর প্রয়োজন আপনাদের নেই। আপনারা নিজের নাগরিকদের মানবাধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হোন।”
অন্যদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।
মার্কিন কর্মকর্তার আগমন ঘিরে এই মানববন্ধন কি-না, এমন প্রশ্নে মানিক বলেন, “যেহেতু আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের দেশগুলো দেখে, এজন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রতিবাদ করেছি।
“আমরা সাধারণ জনগণ। আমরা প্রতিবাদ করছি এ কারণে যে আমার এক বাঙালি ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কথায় কথায় যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমাদের বাঙালি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে।”
মানিক বলেন, “এটা আমরা পৃথিবীকে জানাতে চাই। আমাদের দেশে কিছু হলে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা প্রতিবাদ করে। এখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও প্রতিবাদ করুক। আমরা এটা করেছি, বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় যেন এটা ছড়িয়ে পড়ে।”
মানববন্ধন শেষ হওয়ার কিছু সময় পর মন্ত্রণালয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ ধরনের মানববন্ধন ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ না।
“আমি এর কিছু জানি না। তবে, এ ধরনের বিষয় উৎসাহব্যঞ্জক না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হয়ে থাকে। তাদের ওখানে আইনের শাসন আছে। আমরা বিশ্বাস করি তদন্তের পর এ ঘটনারও বিচার হবে।”
পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “আপনারা যে মানবন্ধন হচ্ছে, দেখলাম বলছেন যে ভিজিটের টাইমের সাথে মিল রেখে করা হয়েছে বা কিছু। মানববন্ধন কারা করেছেন, পুরো বিষয়টা আমি জানি না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যিনি সিনিয়র ডাইরেক্টার, তার কখনোই সকাল ১১টায় শিডিউল ছিল না। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার বৈঠকটা ২টা কিংবা আড়াইটায় হওয়ার কথা।“
তিনি বলেন, “মানববন্ধনটা কাদের, আমি বিস্তারিত দেখতে পারি নাই। যারা করেছেন, তারা আমাদেরকে এটা চিঠি দিয়ে জানাতে পারতেন।”
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনের কাছে ইতোমধ্যে তুলে ধরেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে এখানে ন্যায়বিচার হবে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হয়েছেন, তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বা ডিউটি থেকে সরানো হয়েছে।
“এমন তথ্য আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। আমরা আশা করি, তারা যেভাবে আশা করেন, সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকও সুবিচার পাবেন। আর এই মানববন্ধনের বিষয়টি আমি বিস্তারিত জানি না, কাগজটা দেখলে হয়ত বুঝতে পারব কি আছে।”