স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যয়

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ৫২ বছর পূর্ণ হওয়ার সেই ঐতিহাসিক দিনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জাতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 06:30 PM
Updated : 25 March 2023, 06:30 PM

পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার ৫২তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যয় জানাচ্ছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে নিজেদের একটি দেশ, একটি পতাকা পেতে মুক্তিকামী মানুষের যুদ্ধ শুরুর সূচনা লগ্নের দিনটি আবার হাজির বছর ঘুরে; সেই ঐতিহাসিক দিনের স্মরণে নানা আয়োজন করছে জাতি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দর্শনে সরকার বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজীকরণ এবং দেশের উন্নয়নে আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে।

বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চলেছিল গণহত্যা।

ওই আক্রমণ বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধের পথ তৈরি করে দেয়; ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করে দেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীন।

পাকিস্তানিরা বন্দি করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি জাতি পৌঁছায় মুক্তির বন্দরে, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

পরাধীনতার সেই শৃঙ্খল ভাঙার ৫২ বছর পূর্ণ হচ্ছে শনিবার। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, “গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।”

আবদুল হামিদ মনে করিয়ে দেন, নতুন প্রজন্ম যে পথ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

“ভবিষ্যতেও তার দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান।”

এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অর্থাৎ রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের নির্বাচনী ইশতাহার বাস্তবায়ন অগ্রগতিও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। এ সকল কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা এবং জোরালো সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।”

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়লে মুক্তি মেলেনি বাংলার মানুষের। জীবন ছিল পাকিস্তানি শেকলে বাঁধা। সেই শেকল ভাঙার মন্ত্র দিয়ে বাঙালিকে জাগিয়ে তোলেন শেখ মুজিব। বাংলার মানুষ যাকে ভালবেসে নাম দেয় বঙ্গবন্ধু।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রবাণীর পর ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকাকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ইপিআরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ হলেও পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রের সামনে তা টিকেনি বেশিক্ষণ।

মেশিনগান, কামানের গোলার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় শহরজুড়ে।

পৈশাচিক বর্বরতার মধ্যেই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে পাকিস্তানি বাহিনী। তার আগেই বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে তারবার্তা পাঠিয়ে যান তিনি, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হয় ইপিআরের ওয়্যারলেস বার্তায়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাংলাদেশে প্রতিরোধ শুরুর খবর আসতে থাকে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে ২৭ মার্চ বিবিসি জানায়, শেখ মুজিবুর রহমান গোপন বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।

সেই মরণপণ লড়াই চলে পরের নয়টি মাস। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ধরা দেয় বিজয়। বাঙালির আত্মত্যাগ পরিণতি পায় বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের এক নতুন রাষ্ট্রের অবয়বে।

তারপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা আসে স্বাধীনতার; পরম শ্রদ্ধায় তাকে জাতির পিতা হিসেবে বরণ করে নেয় নতুন দেশ।

স্বাধীনতার ৪ বছরের মধ্যে ষড়যন্ত্রের জালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা শুরু হলেও কয়েক দশক বাদে ক্ষমতায় ফিরে বাংলাদেশকে পথে ফেরানোর দায়িত্ব নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ।

উচ্চ প্রবৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠা, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা সূচকে অগ্রগতির চমক দেখিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

নানা আয়োজন

রোববার প্রত্যুষে ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ ছুটির এ দিনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় হবে আলোকসজ্জা।

জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।

দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবে আওয়ামী লীগ।

বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং দোয়া, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়া ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১১টা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।