সম্পদের তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা উঠে গেলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে: টিআইবি

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার ও শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার ঠিক উল্টো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 02:51 PM
Updated : 19 March 2024, 02:51 PM

সরকারি কর্মচারির সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে বলে মনে করছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

ম্ঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, গণামধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ সংশোধন করে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে টিআইবি বলছে, এ উদ্যোগের ফলে দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে জবাবদিহিতা থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি সুরক্ষিত ও উৎসাহিত হবে।

সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রহিত করে এ সংক্রান্ত খসড়া সংশোধনী যাচাইয় করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন প্রশাসনিক উন্নয়নবিষয়ক কমিটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এটি হলে অসাধু ব্যক্তিদের আরো বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার ও শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার ঠিক উল্টো।

“সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার মতো কোনো বিধান না থাকলে সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে নির্ভয়ে দুর্নীতি, এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুযোগ বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। একই সঙ্গে প্রাপ্য সেবা পেতে সরকারি অফিসে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে, অবৈধ অর্থ লেনদেন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি সুশাসিত সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিতের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।”

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার কথা। প্রতি বছর তথ্য হালনাগাদে অনীহা দেখা দিলে পাঁচ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করে সরকার।

এখন প্রতি পাঁচ বছর পর হালনাগাদের পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দেওয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন থেকে সম্পদ তথ্য নেওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রস্তাবনাটিকে যুক্তিহীন দাবি করে টিআইবি বলছে, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। আইনের ৩০৯(২) এবং ৩০৯(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো সরকারি কর্মচারীকে এই আইনের অধীনে ট্যাক্স রিটার্ন, অ্যাকাউন্ট বা নথি উপস্থাপন, সাক্ষ্য বা প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপনের আদেশ দিতে পারে না।

এর ফলে দুর্নীতি বা বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ আহরণের অভিযোগে কোনো ব্যক্তির আয়কর বিবরণী আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেখতে পারবে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই আচরণবিধি সংশোধন করা হলে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরা নতুন সুরক্ষা লাভ করবে মনে করছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০০৩ সালে গৃহীত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ (আনকাক) এ জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রতি বছর দাখিল ও তার বছরভিত্তিক পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।

“বাংলাদেশ আনকাক এর সদস্য দেশ, অথচ সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধিতে এমন সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া বৈশ্বিক আদর্শিক চর্চা ও আনকাক এর দুর্নীতিবিরোধী মূলনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২’ কেও পদদলিত করা হবে।” 

তিনি এ ‘আত্মঘাতী উদ্যোগ’ থেকে সরে আসতে আহ্বান জানান।