ঢাকা সফরে যে বক্তব্য মিশেল ব্যাশেলে দিয়েছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের অবস্থান একই আছে বলে জানানো হয়েছে।
Published : 30 Aug 2022, 08:17 PM
জেনিভায় বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলের বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে নানা আলোচনার মধ্যে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে তার দপ্তর।
মঙ্গলবার তাদের এক বিবৃতিতে ব্যাশেলে বক্তব্য নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানো দেখে হতাশা প্রকাশ করেন মানবাধিকার হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে ‘ভুল তথ্য’ কী, সেটা সুনির্দিষ্ট করেননি তিনি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে মিশেল ব্যাশেলের ঢাকায় দেওয়া বক্তব্যকে এক্ষেত্রে মানবাধিকার হাই কমিশনার কার্যালয়ের অবস্থান হিসাবে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে মুখপাত্র বলেন, জেনিভায় সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারের বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন মিশেল ব্যাশেলে। তার ওই বক্তব্যকে ‘বৈশ্বিক প্রতিবেদন’ হিসাবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সফরের এক সপ্তাহ পর ২৫ অগাস্ট জেনিভায় মানবাধিকার হাই কমিশনার হিসাবে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাশেলে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ না থাকার বিষয়টি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী সামনে আনেন।
গত শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশিত হয়নি।”
দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ভিত্তিহীন প্রচার চালাচ্ছে দাবি করে তিনি আরও বলেছিলেন, “ভিত্তি না থাকার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি।”
পরদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেন, উদ্বেগ প্রকাশ না করে ব্যাশেলের দেওয়া বক্তব্য ‘সুগভীর ও ভালোভাবে বোধগম্য’।
সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ নিয়ে জেনিভায় ব্যাশেলের বক্তব্যে আলাদাভাবে কিছু না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, “আপনারা নিশ্চয় জানেন, সরকার, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্যদের সাথে সংলাপে এবং তার ঢাকা সফরের বিবৃতিতে মানবাধিকারের বিস্তৃত ক্ষেত্রে তার উদ্বেগের জায়গাগুলো নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন হাই কমিশনার।
“যেহেতু হাই কমিশনার বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিষয়ে ইতোমধ্যেই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন, সেহেতু ২৫ অগাস্ট জেনিভায় তার মেয়াদ শেষের বক্তব্যে জোর দিয়েছেন বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর উপর, যা বাংলাদেশসহ সব দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কটের পাঁচ বছর পূর্তির ওই দিনে শরণার্থীদের নিয়েও আলোকপাত করেছেন। এটাকে ‘গ্লোবাল রিপোর্ট’ মনে করার কোনো মানে নেই।”
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা সফরে যে বক্তব্য ব্যাশেলে দিয়েছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের অবস্থান একই আছে বলে বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়।
“যেভাবে হাই কমিশনার ঢাকায় তার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জকে স্বীকার করাই হচ্ছে সেটাকে উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ’। হাই কমিশনারের সুপারিশ অনুযায়ী সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় কাজ করতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় প্রস্তুত আছে।“
১৪ অগাস্ট থেকে চার দিন বাংলাদেশ সফর করেন মিশেল ব্যাশেলে বাংলাদেশে গুম-খুনের অভিযোগ স্বাধীন ও বিশেষায়িত নতুন একটি সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গুম-খুনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন সংস্থা চায় জাতিসংঘ
ওই সফরে সরকারের মন্ত্রীদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেন তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও বৈঠকের পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরেও যান তিনি।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে ব্যাশেলে আরও বলেন, জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিসহ সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে গত কয়েক বছর উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
“এসব অভিযোগের অনেকগুলোই বর্তায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে এবং এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাবের অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি এবং এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছি।”
২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন চিলির দুইবারের প্রেসিডেন্ট ব্যাশেলে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের পদে তার চার বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার।