আগে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন আলাদা দুটি দিনে ছিল, এখন একদিনে হওয়ায় অনেকের মাঝে দোটানা দেখা দিয়েছে।
Published : 13 Feb 2023, 11:38 PM
মাঘের শেষ দিন সোমবার বইমেলায় বাসন্তী সাজে দেখা গেল একদল তরুণীকে, পহেলা ফাল্গুন উদযাপনে যেন আর তর সইছিল না।
উচ্ছ্বসিত এই তরুণীদের কাছে গিয়ে জানা গেল, তারা লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী, থাকেন জিগাতলা এলাকায়। মঙ্গলবার ভিড় বেশি হবে বলে আগের দিন তারা ঘুরতে বেরিয়েছেন।
শাড়ি পরার কারণ জানতে চাইতেই তাদের একজন অন্তরা রহমান হাসতে হাসতে বললেন, তার কাছে বসন্ত মানেই ১৩ ফেব্রুয়ারি।
তার ভাষ্যে, “এই সেদিনও ফেব্রুয়ারি আসা মানেই ছিল অন্যরকম একটা এক্সাইটমেন্ট! আমরা বন্ধুরা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্ল্যান করতাম যে বসন্তের দিন বাসন্তী রঙা শাড়ি কিনব, নাকি বন্ধুদের থেকে ধার নেব।
“আর ১৪ ফেব্রুয়ারি মানে তো ছিল অবশ্যই লাল শাড়ি। সেসময় দুই দিনের জন্য দুইটা শাড়ি ম্যানেজ করা চাপের ছিল। কিন্তু এখন তো আর শাড়ি কেনার সেই চাপ নাই। তবে একইদিনে লাল পরবো নাকি হলুদ, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া তো অন্য লেভেলের চাপ। তাই আজকেই চলে আসছি আরকি!”
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হয় বিশ্বজুড়ে; আর বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন একান্তই বাঙালির উৎসব।
মঙ্গলবারেও কি মেলায় আসা হবে- প্রশ্ন শুনে অন্তরার বান্ধবী মেহনাজ বললেন, “না। কালকের ভিড় এড়াতেই তো আজ সবাই মিলে বের হয়েছি। কাল আর আসা হবো না সম্ভবত।”
ভালোবাসার মানুষের জন্য বই কিনেছেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “আমি ভাই সিঙ্গেল মানুষ। আমার কাছে সবদিন-ই এক। ভালোবাসা দিবস বলতে কিছু নাই জীবনে।”
তবে ‘সিঙ্গেল’ নন আজিমপুর থেকে আসা সুমাইয়া সুলতানা। তবে প্রিয় মানুষকে কাছে না পেয়ে মন ভার ছিল তার।
সুমাইয়ার কথায়, “গত বছরের মাঝামাঝিতে পড়াশোনার জন্য বেলজিয়ামে চলে গেছে ও। তাই এ বছর আর আমাদের একসঙ্গে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করা হল না। মিস করছি ওকে।”
তবে আগামীর কথা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছেন তিনি।
“এই ডিসেম্বরেই বিয়ে করছি আমরা। তখন আর এসব দিবস-টিবস মিস হওয়ার কোনো চান্স থাকবে না।”
কয়েক বছর আগেও পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন ডে পরপর দুটি দিনে উদযাপন হতে, তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কারণে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি পরিবর্তন করা হয়েছিল খ্রিস্টীয় ২০১৯ সাল বা ১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে। তাতে ১৯৫২ সালের মতো ২১ ফেব্রুয়ারি ৮ ফাল্গুনই কিংবা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পয়লা পৌষেই সমন্বয় করা গেলেও পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস হয়ে যায় একদিনে। তাই দুদিনের জন্য আলাদা পোশাক যারা পরে আসছিলেন, তারা পড়েছেন দোটানায়।
তবে ভুলে বা সচেতনভাবেই ১৩ ফেব্রুয়ারিতে বাসন্তী সাজে এবারের মতো গতবছরও অনেককেই বাইরে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল।
এদিন হলুদ শাড়ি আর খোঁপায় ফুল জড়িয়ে একুশে বইমেলায় আসেন আসমা সুলতানা। তার স্বামী অনিকেত অনিক গায়ে জড়িয়েছিলেন হলুদ পাঞ্জাবি। পুঁথিনিলয় প্যাভিলিয়নের সামনে কথা হলো তাদের সাথে।
মেডিকেলে পড়ার দিনগুলোতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অনিক ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় ঘুরতে এসে সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিলেন আসমা। ২০২০ সালে মহামারীর মাঝেই সংসার জীবন শুরু করেন তারা।
অনিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “এমন ফাগুন দিনেই তো আমাদের প্রেমটা জোড়া লেগেছিল। তাই এবারও তেরই ফেব্রুয়ারির দিনটিতে উদযাপন করতে বইমেলায় এসেছি।”
মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে আসা রাকিবুল হাসান বই কিনবেন প্রেমিকার জন্য। তিনি বলেন, “গার্লফ্রেন্ডকে ফুল আর বই গিফট করবো। ফুল যাওয়ার সময় কিনব। কিন্তু বই কী কিনবো, ডিসাইড করি নাই এখনও।
“কালকে (১৪ ফেব্রুয়ারি) আমরা শাড়ি-পাঞ্জারি পরে ঘুরতে বের হব- বন্ধুবান্ধব নিয়ে। সুন্দর সুন্দর ছবি তুলব, খাব-দাব। আসলে প্রতিবছর এই দিনটার জন্য ওয়েট করি আমরা।”
ঋতুরাজ বরণে আয়োজন
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী মঙ্গলবার বসন্ত উৎসব উদযাপন করবে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।
এ বছর পহেলা ফাল্গুনে ঢাকার তিন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় নাচ, গান, আবৃত্তি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হবে ঋতুরাজকে।
চারুকলায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের বসন্ত কথন পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান অংশ নেবেন।
বিকাল ৩টা থেকে চারুকলার বকুলতলার পাশাপাশি উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ ও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান চলবে।