এসে গেছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির ‘দরজা’

এ বছরের শেষ পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তারা

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2023, 02:53 PM
Updated : 19 Feb 2023, 02:53 PM

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ট্রান্সপোর্ট গেটওয়ে’ চুল্লিতে স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আনা হয়েছে। 

চুল্লির সবচেয়ে ওপরের অংশে ‘ঢাকনা বা দরজা’ হিসাবে কাজ করা এই গেটওয়ে স্থাপনের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হবে বলে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা অলক চক্রবর্তী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক দিন আগেই এই গেটওয়েটি এসেছে। ২৭৫ টন ওজনের প্রকাণ্ড এই ধাতবখণ্ডটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চুল্লিতে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।” 

নিয়ম অনুযায়ী, এর নকশার সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলোর ‘ইনসপেকশন’ শেষে এটি চুল্লির ওপর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপক ওয়াজিহুর রহমান বলেন, “এটা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লির গেটওয়ে বা ঢাকনা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন্যান্য যন্ত্রপাতির মতই এটা নদীপথে কেন্দ্রের পাশে জেটিতে এসেছে। সেখান থেকে ক্রেন ও ভেহিকলের সাহায্যে চুল্লির কাছে এনে রাখা হয়েছে।”

এই গেটওয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে চুল্লি বানানো হয়েছে, তার ভেতর জ্বালানি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের একটি পথ রাখা হয়েছিল।  এই ঢাকনা বা গেটওয়েটি দিয়ে সেই পথ বন্ধ করা হবে। ২৭৫ টন ওজনের এই গেটওয়েটি বায়ু প্রতিরোধী (এয়ারটাইট) করে স্থাপন করা হবে।”

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৯০ শতাংশ কাজ শেষে হচ্ছে জানিয়ে ওয়াজিহুর রহমান বলেন, “অনেকটা ঢাকনা হিসাবে কাজ করা এই গেটওয়ে স্থাপনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের কারিগরি কাজ শেষ হবে। এর বাইরে বাকি থাকবে কেবল ফিনিশিং ও অন্যান্য কাজ। সবকিছু শেষ হলে, চলতি বছরের শেষ দিকে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সাপেক্ষে উৎপাদনে যেতে পারবে দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।” 

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংস্থা রোসাটমের পক্ষে থেকে জানান হয়েছে, ১৫ দশমিক ৭ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রশস্ত এই গেটওয়ের ওজন ২৭৫ টন। এটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খুবই ভারী একটি যন্ত্র যা মূলত চুল্লির ওপরে ঢাকনা হিসাবে স্থাপন করে বায়ু নিরোধ করা হবে।” 

১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে। সেখানে দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই নির্মাণ ব্যয়ের ১০ শতাংশের অর্থায়ন করছে সরকার, বাকি ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসাবে দিচ্ছে। 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে তা আরও ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে বলে এর আগে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। 

বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ভাবনা ১৯৬১ সালে শুরু হলেও ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সক্রিয়ভাবে আলোচনায় আসে।

২০১৩ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দুই দেশের সরকারের ফলপ্রসূ আলোচনার পর নিশ্চিত হওয়া যায়, রুশ সহযোগিতায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। 

ওই বছরের অক্টোবরেই পাবনার ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লি ও পানি শীতলকারী ডোমের কনক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন।   

২০২১ সালের শুরুতে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। সবশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশা করা হলেও, এখন সেই দিন তারিখ বছরের শেষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।