পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর আদালত থেকে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ এসেছে।
Published : 22 Feb 2023, 10:39 PM
‘বিচারিক হয়রানি’র অবসানে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের চারজন র্যাপোর্টিয়ার।
বুধবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান মত প্রকাশ ও প্রচারের অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান, মানবাধিকারকর্মীদের অবস্থা বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার মেরি ললর, নারী ও নারী শিশুদের প্রতি সহিংসতার কারণ ও পরিণতি বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার রিম আলসেলাম এবং বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার মার্গারেট স্যাটাথুয়েট।
বিবৃতিতে বলা হয়, “অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের এবং এর প্রলম্বিত তদন্তে প্রতিশোধ পরায়ণতার ছাপ দৃশ্যমান, যা দেখে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।”
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনাকে ২০২১ সালের ১৭ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকে রাখেন। তারা অভিযোগ তোলেন, এই সাংবাদিক বিনা অনুমতিতে কোভিড-১৯ এর টিকা কেনা সম্পর্কিত সরকারি নথিপত্রের ছবি মোবাইল ফোনে তুলেছিলেন।
পরে রোজিনার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেসি আইন এবং দণ্ডবিধির আওতায় মামলা দায়ের করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
তবে গত বছরের ৩ জুলাই পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে। যেখানে বলা হয়, রোজিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ছয় দিন পর কারামুক্ত সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেলেন ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’
সাত মাস পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক আবেদনে আদালত পুলিশকে অধিকতর তদন্ত চালাতে নিৰ্দেশ দেয়।
এ বিষয়ক শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি এল।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, “বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনার, যা প্রায়ই ভিত্তিহীন, এবং পরে সেই সব মামলার মীমাংসা না করে ঝুলিয়ে রাখার বিপজ্জনক প্রবণতাটিরই প্রতিফলন রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় এই দীর্ঘসূত্রতার বৈশিষ্ট্যটি।
“তাদেরকে হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, হয়রানি করা এবং তাদেরকে চুপ করিয়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়।”
বিবৃতিদাতারা বলেন, “সরকারের উচিৎ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আইনি কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করা। একইসাথে, ঔপনিবেশিক আমলের দাপ্তরিক গোপনীয়তার আইন এবং সাম্প্রতিককালের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটিও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
“একইসাথে সরকারের উচিৎ দেশের আইন এবং তার প্রয়োগকে মানবাধিকার রক্ষায় দেশটির আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।”
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত।