মার্কেটের ছয়টি সিঁড়ি রয়েছে, কিন্তু সেগুলো উন্মুক্ত নয়। ইলেকট্রিসিটির তার যেখানে-সেখানে ঝুলে রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় অগ্নি সংকেত ব্যবস্থা স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল, সেটি এখনও করা হয়নি।
Published : 06 Apr 2023, 02:05 PM
ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শন করে বেশকিছু ঝুঁকির কথা বলছে ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ফায়ার সার্ভিস, ডিজিএফআই ও এনএসআই কর্মকর্তাদের একটি দল গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শনে যান। এরপর দোকান মালিক সমিতির অফিসে বসে মার্কেট সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য পূরণ করে গোটা মার্কেট ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, “এই মার্কেটের ছয়টি সিঁড়ি রয়েছে, কিন্তু সিঁড়িগুলো উন্মুক্ত নয়। ইলেকট্রিসিটির তার যেখানে-সেখানে ঝুলে রয়েছে। এছাড়া মার্কেটটিতে স্বয়ংক্রিয় অগ্নি সংকেত ব্যবস্থা স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল সেটি এখনও করা হয়নি।
“এখানে অগ্নি নির্বাপনের কোনো প্যানেল বোর্ড নেই, এই বোর্ড থাকলে একটি ঘরে বসেই দেখা যায় কোথায় আগুন লেগেছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিজেদের অগ্নি নির্বাপনী জনবল গড়ে তুলতে বলা হয়েছিল, যেটি এখনো দৃশ্যমান হয়নি।”
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সাততলা এই মার্কেটে ৪৩০টি দোকান রয়েছে। বেশিরভাগই নারীদের পোশাক, জরি, লেইস, গয়না ব্যাগ, জুতা ও কসমেটিকসের দোকান। মার্কেটের উপরের তলাগুলোতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অফিস ও গুদাম।
তিন বছর আগে এই মার্কেটে অগ্নি নির্বাপনী মহড়া দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। বজলুর রশিদ জানান, তখন ব্যবসায়ীদের কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। যেগুলোর অনেকগুলোই তারা পালন করেছেন।
“এই মার্কেটের ৬০টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্থাপন করা হয়েছে বলে তারা (ব্যবসায়ীরা) আমাদের জানিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘুরে দেখেছেন সেগুলোর মেয়াদ আছে এবং সেগুলোর মনোমিটারে পর্যাপ্ত প্রেসার শো করছে।
“তবে আপনারা দেখেছেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ফর ফায়ার সার্ভিসকে পানির সংকটে পড়তে হয়েছিল। সেজন্য এই মার্কেটে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল, যা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে তারা জানিয়েছেন, তারা একটি ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভার স্থাপন করেছেন। এখানে পর্যাপ্ত পানি থাকতে হবে বলে আমরা তাদের জানিয়েছি।”
গাউছিয়া মার্কেটের যে ছয়টি সিঁড়ি রয়েছে, দোকান বসার কারণে সবগুলোই অপ্রশস্ত হয়ে পড়েছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এসব সিঁড়ি দিয়ে পর্যাপ্ত মানুষ নামতে পারবে না বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক বজলুর।
“যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে এই সিঁড়িগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত মানুষ নামতে পারবে না। আর সিঁড়িতে যদি আগুন লেগে যায় তাহলে সেই সিঁড়ি ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। তাই সিড়ি খালি রাখা বাঞ্ছনীয়।”
সিঁড়িতে বসা রোমিও-জুলিয়েট নামে একটি পোশাকের দোকানের কর্মীরা জানান, তারা সেখানে প্রায় ২০-২৫ বছর ধরেই আছেন। সিঁড়ির মাঝে হলেও দোকানের পজিশন ও ভাড়ার অঙ্ক কম নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাউছিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বাবু বলেন, “মার্কেট তৈরির সময় থেকেই এই সিড়ির দোকানগুলো রয়েছে। আমরা এগুলো বরাদ্দ দিইনি।”
তিন বছর আগে ফায়ার সার্ভিস যে পরামর্শ দিয়েছিল, সে অনুযায়ী ‘শতভাগ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টার’ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মার্কেটের বৈদ্যুতিক লাইন শতভাগ তাদের (ফায়ার সার্ভিস) পরামর্শ মত উন্নত করা হয়েছে, বসানো হয়েছে ফায়ার এক্সটিংগুইশার। তারা এখন যে পরামর্শ গুলো দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।”
ভয়াবহ আগুনে ঢাকার কাপড়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই হওয়ার পরদিন বুধবার ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বিপণীবিতানগুলোয় জরিপ চালাবে তারা।
কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিন বৃহস্পতিবার গাউছিয়া মার্কেট পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস ও অন্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিম, যারা ব্যস্ত এই মার্কেটকে আগে থেকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মনে করে আসছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বুধবার বলেন, ”আপাতদৃষ্টিতে রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়াসহ বেশ কিছু মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে এসব মার্কেটে জরিপ শুরু হবে। জরিপের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবেই জানানো হবে।”
আরও পড়ুন-