জলাধার ও গাছপালা থাকলে তাপমাত্রা বেশি হলেও গরম অসহনীয় হয় না, বলছেন গবেষকরা।
Published : 17 Apr 2023, 01:47 AM
গড়ের চেয়ে ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রায় বৈশাখ যখন দেশকে পোড়াচ্ছে, সে সময় রাজধানীতে জলাশয়, খোলা জায়গা ও গাছ কমে আসার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
ঢাকায় দুই দশকের পরিস্থিতি নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে নগরে জলাশয় ও খোলা জায়গার পরিমাণ কমে তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে।
এই সময়ে এক দশকে নগরে সবুজ আচ্ছাদন বাড়লেও পরের দশকে তা আবার নিম্নমুখী হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর এই জরিপটি চালানো হয় আরও চার বছর আগে। এর পর জলাশয় ভরাট আর গাছ কাটার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে আর নগর বনায়নের যে প্রকল্প ছিল, তাতেও গতি আসেনি।
বিআইপি জানাচ্ছে, তাদের আরও একটি গবেষণা চলছে। সেটি এখন প্রকাশ হয়নি। তবে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ, খোলা জায়গা ও জলাশয় আরও কমেছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একটি ‘আদর্শ শহর’ গড়ে ওঠে কংক্রিট, সবুজ ও পানির সমন্বয়ে। অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ, ১৫ শতাংশ জলাধার থাকবে। বাকি ৬০ ভাগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কংক্রিট এলাকা করতে পারে, বাকিটা ভবনের মাঝখানে খালি জায়গা হিসেবে থাকবে।
কিন্তু ঢাকায় এখন মোট জমির ৮০ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে কংক্রিট, ৯ শতাংশের কিছু বেশি এলাকায় সবুজ আচ্ছাদন টিকে আছে। খোলা জায়গা এবং জলাভূমি আছে পাঁচ শতাংশেরও কম।
আইন করার পর ভরাট ৭০ শতাংশ
বিআইপির ‘সবুজ এলাকা, জলাশয়, খোলা উদ্যান ও কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার বিদ্যমান অবস্থা সংক্রান্ত’ গবেষণার তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালে যেখানে ঢাকায় জলাভূমি ছিল ১৯ দশমিক ০৯ বর্গকিলোমিটার, যা শহরের মোট আয়তনের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
২০০৯ সালে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে হয় ৭ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার। শতকরা হিসাবে তা দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ বছরে ভরাট হয় ১১ দশমিক ৪১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা।
অথচ এই এক দশকের মধ্যেই ২০০০ সালে সরকার করে জলাধার আইন, যার ৫ ধরায় বলা আছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সেই জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করাও যাবে না৷
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও (২০১০ সালে সংশোধিত), যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।
২০১৯ সালের তথ্য বলছে, আগের ১০ বছরে জলাশয় ভরাট হয় আরও ১ দশমিক ৮১ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর জলাভূমি পাওয়া যায় ৫ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর রাজধানীর মোট আয়তনের মধ্যে জলাশয়ের অনুপাত নামে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে।
অর্থাৎ দুই দশকে জলাশয় ভরাট হয়েছে ১৩ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ।
কমছে খোলা জায়গা
১৯৯৯ সালে জলাশয় ও খোলা জায়গার অনুপাত ছিল কাছাকাছি। ওই বছর ঢাকায় ১৮ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার খোলা জায়গা পাওয়া যায়। রাজধানীর মোট আয়তনের ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ জায়গা ছিল উন্মুক্ত।
২০০৯ সালে তা আরও কমে হয় ১০ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটার। শতকরা হিসেবে খোলা জায়গা কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮০ শতাংশে।
অর্থাৎ এক দশকে ভরাট হয়েছে ৮ দশমিক ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা।
এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং অন্যান্যরাও খোলা জায়গা সংরক্ষণ নিয়ে বহুবার কথা বলেছেন।
কিন্তু এর সুফল মেলেনি। উল্টো ২০১৯ সালে দেখা যায়, এক দশকে খোলা জমি কমেছে আরও ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার।
অর্থাৎ দুই দশকে খোলা জায়গা কমেছে ১২ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার বা ৬৭ শতাংশ।
সবুজ আচ্ছাদন বেড়েও কমল
এই সময়ে ঢাকায় বনায়ন ও বৃক্ষ রোপণে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের প্রণোদনা। কিন্তু ঢাকায় গাছের পরিমাণ বেড়ে গিয়েও কমেছে।
১৯৯৯ সালে ঢাকায় সবুজ আচ্ছাদন ছিল ৮ দশমিক ৯৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। ওই বছর রাজধানীর ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এলাকা বৃক্ষ আচ্ছাদিত ছিল।
পরের এক দশকে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়। ২০০৯ সালে রাজধানীতে সবুজ আচ্ছাদন পাওয়া যায় ১২ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে। ওই বছর রাজধানীর আয়তনের ৯.২৯ শতাংশ এলাকায় গাছের উপস্থিতি দেখা যায়।
কিন্তু পরের এক দশক পরিস্থিতির অবনতি হয়। এই এক দশকে সবুজ আচ্ছাদন কমেছে আগের চেয়ে ০ দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার। শতকরা হিসেবে সবুজের পরিমাণ কমে হয়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশে।
কংক্রিট বাড়ছেই
জলাভূমি ও খোলা জায়গা কমে এই দুই দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা। অর্থাৎ ভরাট হওয়া জমিতে মূলত গড়ে উঠেছে কংক্রিটের স্থাপনা।
১৯৯৯ সালে ঢাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৮৭ দশমিক ০৯ বর্গকিলোমিটার। ওই সময় রাজধানীর আয়তনের ৬৪ শতাংশে ছিল পাকা স্থাপনা।
এক দশক পরে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৬ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটার বেড়ে হয় ১০৩ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ওই বছর রাজধানীর আয়তনের ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশতেই পাওয়া যায় পাকা স্থাপনা।
২০১৯ সালে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার অনুপাত আরও বেড়ে হয় ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই বছর ১০৯ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পাওয়া যায় পাকা স্থাপনা।
অর্থাৎ ২০ বছরে জলাশয় ও খোলা জায়গা কমেছে মোট ২৫ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। আর এর মধ্যে পাকা স্থাপনা বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে। শতকরা হারে পাকা স্থাপনা দুই দশকে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
গত চার বছরে ‘আরও অবনতি’
বিআইপির সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঢাকার জলাশয়, সবুজ আচ্ছাদন এবং কংক্রিটের আচ্ছাদিত এলাকা নিয়ে তারা আবারও গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা দেখেছেন জলাশয়-সবুজ আচ্ছাদন কমার পাশাপাশি আরও বেড়েছে কংক্রিটের আচ্ছাদন।
তিনি বলেন, “বিশেষ করে আমিনবাজার, আশুলিয়ায় ভরাট করা হয়েছে। দখল এবং ভরাটের বিরুদ্ধে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপই নাই। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক বা পুলিশ- কোনো সংস্থারই তেমন উদ্যোগ নেই। এভাবে শহর টিকে কীভাবে?”
দায়ী সরকারি সংস্থাও
এই যে ও খোলা জায়গা ভরাট হয়েছে, সে জন্য কাউকে শাস্তি পেতে হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। বরং সরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ।
সম্প্রতি ঢাকার কল্যাণপুরের রেগুলেটিং পন্ডের কাছের ১১ একর নিচু জমি ভরাট করে গবেষণাগার তৈরি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা বিএডিসি। ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই নিচু জমিটি ড্যাপে জলাধার হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করতে বনানীর কাকলী থেকে-বনানী রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশের জলাধার, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক এবং রেললাইনের মাঝখানের জলাধার ভরাট হয়েছে।
কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণের সময়ও ভরাট করা হয়েছে জলাধার। তবে সেখানে একটি লেক রাখা হয়েছে।
কুড়িল বিশ্বরোড-জোয়ারসাহারার মাঝখানের নিচু জমি ভরাট করে পূর্বাচল প্রকল্পের একটি সাইট অফিস করা হয়েছে। উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টর এলাকাটিও একসময় বিস্তীর্ণ জলাধার ছিল।
খিলক্ষেতের পুলিশ অফিসার্স হাউজিং, আশিয়ান সিটি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ৩০০ ফুট সড়ক তৈরিতেও ভরাট হয়েছে জলাভূমি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিন বাজার ল্যান্ডফিল, একই এলাকায় মধুমতি মডেল টাউন ও আমিনবাজার জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও করা হয়েছে জলাভূমি ভরাট করে।
বনশ্রী, আফতাবনগর, সাঁতারকুল এবং ঢাকার পশ্চিমে মোহাম্মদপুরের বছিলা এবং আশেপাশের এলাকাও গড়ে তোলা হয়েছে নিচু এলাকা ভরাট করে।
নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় আছে জলাধার রাখতে হবে, সবুজ এলাকা রাখতে হবে। কিন্তু তারা নিজেরাও রাখতে পারছে না এবং বেসরকারি পর্যায়ে যেসব আবাসন হচ্ছে তাদেরকেও মানাতে পারছে না। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা।
“ব্যবসায়ীদের মুনাফার লোভ, ব্যক্তি পর্যায়ে আইন না মানা, সবুজ এলাকা, খোলা জায়গা না থাকার প্রবণতা মারাত্মক। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিশিষ্ট নাগরিকদেরও দায়ী করা যায়,তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা বলে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার জলাধার ও নিচু ভূমির মালিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারাই সেগুলো ভরাট করছে। জলাধার আইন না মেনে সেগুলো ভরাটের বিরুদ্ধে ডিএনসিসি আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছে।
“কল্যাণপুরে বিএডিসি অনেকটা জায়গা ভরাট করেছে, সেটা তো সরকারি প্রতিষ্ঠান। কুড়িলে রেলওয়ের নিচু জায়গা ভরাট করে হোটেল বানানোর উদ্যোগ আটকে দিয়েছিলাম। তারা নাকি কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে।”
বৃক্ষ রোপণে প্রণোদনা দিয়ে আবার গাছও কাটছে
ছাদ বাগানে উৎসাহী করতে ১০ শতাংশ কর ছাড়ের ঘোষণা আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। অথচ এই সংস্থার বিরুদ্ধেই আছে নিজেই বৃক্ষ রক্ষায় উদাসীনতার অভিযোগ।
মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর পর্যন্ত সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়নকাজে সড়কজুড়ে সড়ক বিভাজক উঁচু করা হচ্ছে দেয়াল দিয়ে। এজন্য মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত বিভাজকের বিভিন্ন জায়গায় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অনেক জায়গায় শেকড় কেটে ফেলায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে।
২০১৭ সালে গুলশান শুটিং ক্লাব থেকে লেক পার্ক পর্যন্ত গুলশান এভিনিউ সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছিল। শেকড় কেটে ফেলায় মারা পড়েছিল আরও কিছু গাছ।
ওই বছরই উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়নকাজ চালাতে গিয়ে সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতের গাছও কেটে ফেলা হয়।
গত জানুয়ারিতে ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকের গাছ কেটে ফেলা হয়।
মহাখালী থেকে বনানী সড়কের পাশের সবুজ বেষ্টনীর গাছপালা কেটে মহাখালীতে করা হয়েছে অস্থায়ী বাজার। সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, সড়ক ও জনপথের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় করতে গিয়েও কাটা হয়েছে গাছ।
বিমানবন্দর সড়ক ধরে বনানীর কাকলী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুপাশের গাছপালা কেটে ‘সৌন্দর্যবর্ধন’ করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের জন্য বেগম রোকেয়া সরণির সড়ক বিভাজক এবং দুপাশের গাছ, সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য আগারগাঁও থেকে শ্যামলী শিশু মেলা পর্যন্ত সড়কের বিভাজকের গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। বিআরটি প্রকল্পের জন্য উত্তরায় কাটা হয়েছে গাছ।
এ বিষয়ে মেয়র আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইসলাম বলেন, “কিছু সবুজ এলাকা আগেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ডিএনসিসির উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে যেখানে গাছ কাটা পড়েছিল সেখানে আবার তা রোপণ করা করা হবে।”
তিনি বলেন, “মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত পুরো এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা হয়ে গেছে। কাকলী থেকে বনানী কবরস্থান রোড পর্যন্ত খালি জায়গায় একটা স্থাপনা করার উদ্যোগ আমি ঠেকিয়েছি। আর গুলশান এভিনিউর ডিভাইডারে গাছ লাগানো হয়েছে। মহাখালী-গুলশান সড়কেও গাছ লাগানো হবে। ফুটপাতে জায়গা রেখেছি বৃক্ষ রোপণের জন্য।”
জলাশয়-গাছ কমছে, বাড়ছে গরম
৩০ বছর ধরে ঢাকা কড়াইল এলাকায় বসবাস করেন গোলাপ মিয়া, রিকশা চালান বনানী এলাকায়। শনিবার বনানীর ২ নম্বর সড়কে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। সে সময় তিনি দরদর করে ঘামছিলেন।
গোলাপ বললেন, ‘আজাব’ যাচ্ছে।
“কালকা অনেক গরম গ্যাছে। একটুও ঘুমাইতে পারি নাই। রাইত তিনটা পর্যন্ত রাস্তায় হাঁটি, ক্ষণে ঘরে যাই, ক্ষণে বাইরে যাই। তিনটার পরে ঘুমাইছি।
“যহন প্রথম ঢাকায় আইছি, তখন এত গাড়ি আছিল না। এই বনানী এলাকায় অনেক গাছগাছালি আছিল। এই লেক অনেক বড় আছিল। তহন ইমুন গরম আছিল না।”
নগরে জলাধার ও গাছের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাছপালা বাতাসে জলীয় বাষ্প ছাড়ে, যেটি আশপাশের বাতাস ঠাণ্ডা রাখে। গাছপালা কেটে ফেললে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
“যদি জলাধার এবং গাছপালা থাকে, তাহলে যে পরিমাণ হিট হয়- সে পরিমাণ বাষ্প হবে, যেটাকে আমরা ইভাপোরেশন বলি। তো যত বেশি গাছ থাকবে, তত বেশি ইভাপোরাশন হবে। পাশাপাশি জলাধার থাকলে সেখানকার পানি নিয়মিত জলীয় বাষ্প তৈরি করবে। এতে হিউমিডিটি (আর্দ্রতা) বাড়বে, সেটি বাড়লে তাপমাত্রায় একটা প্রভাব পড়বে। তখন তাপমাত্রা যতই থাকুক, তা মানুষ এবং প্রাণীর জন্য সহনীয় হবে।”
সেই কারণেই কিছু কিছু শহরে ঢাকার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলেও সেখানে মানুষের কষ্ট হচ্ছে না, বলেন তিনি।